অব্যাহত শিক্ষক আন্দোলন: সরকারের সহানুভূতিশীল দৃষ্টি কাম্য
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের একদফা দাবিতে শিক্ষক-কর্মচারীরা গত ১০ দিন ধরে জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকায় অবস্থান করছেন। পাঁচ লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারীর দাবি আদায়ে সারা দেশ থেকে আসা শত শত শিক্ষক সেখানে রাত-দিন অবস্থান করতে গিয়ে অনেকটা মানবেতর পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ঢাকায় আসা অনেকে বলছেন, এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো আশ্বাস তারা পাননি।
সরকারের তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, দেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থায় কয়েক হাজার কোটি টাকার ব্যয় বাড়িয়ে এ রকম অযৌক্তিক দাবি পূরণ করা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় আন্দোলনরত শিক্ষকরাও দাবি আদায় না করে বাড়ি ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন। তারা বলছেন, শিক্ষামন্ত্রীর ওপর থেকে তারা আস্থা হারিয়েছেন। এখন তারা প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চান। সাক্ষাৎ না পেলে এবং সমস্যাটির সুষ্ঠু সমাধান না হলে তারা আমরণ অনশনে যাবেন।
এদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, শিক্ষকদের দাবির প্রতি সরকার সহানুভূতিশীল হলেও দাবি আদায়ে শিক্ষার্থীদের যেভাবে জিম্মি করা হয়েছে তা অগ্রহণযোগ্য। তাছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বই যখন মিতব্যয়িতার নীতি অনুসরণ করছে, তখন হাজার কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির এ দাবি যৌক্তিক কিনা তা বিবেচ্য বিষয়।
আবার জাতীয়করণের একদফা দাবি যে সব এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের, তাও নয়। শিক্ষক সমাজের একটি ক্ষুদ্র অংশ এ আন্দোলনে যুক্ত। বুধবার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেওয়া বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতিসহ সব শিক্ষক সংগঠনের নেতারা যেখানে নির্বাচনের পর কার্যক্রম শুরুর ব্যাপারে ‘কনভিন্সড’ ছিলেন, সেখানে পরে কেন তারা বেঁকে বসলেন, কর্তৃপক্ষের কাছে সেটাই এখন রহস্য।
সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ক্লাসে যা পড়ান, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরাও তা-ই পড়িয়ে থাকেন। নিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রয়োজন হয় একই যোগ্যতার। সেক্ষেত্রে বেতন-ভাতা ও পেনশনে অসামঞ্জস্যতা কাম্য নয়। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোয় বাজেটে শিক্ষা খাতে যেভাবে বাড়তি বরাদ্দ রাখা হয়, আমাদেরও সেদিকে নজর দিতে হবে। চাকরি শেষে শিক্ষকরা যাতে সময়মতো তাদের পাওনা বুঝে পান, আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় না পড়েন, সে ব্যাপারেও সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক হতে হবে। সুন্দর ও সম্মানজনক জীবনযাপনের জন্য শিক্ষকদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধার প্রয়োজন আছে।
একইভাবে জাতির ভবিষ্যৎ গড়ার কারিগর হিসাবে শিক্ষকদের সঠিক দায়িত্ব পালনের জন্য নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তোলা এবং শিক্ষাদানের প্রতি আন্তরিক হওয়ারও বিকল্প নেই। রাজধানী তো বটেই, দেশের প্রায় সব স্থানেই প্রাইভেট কোচিংয়ে পড়ানোর প্রতি অধিকাংশ স্কুলশিক্ষককে বেশি মনোযোগী হতে দেখা যায়। ভালো রেজাল্টের কথা বলে প্রাইভেট পড়ানোর মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি আয়ের যে প্রবণতা দেখা যায়, তা দুঃখজনক। ছাত্রছাত্রীদের সুশিক্ষা প্রদানের জন্য স্কুলের প্রতিই শিক্ষকদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ ও সময় দেওয়া প্রয়োজন।
বর্তমানে জাতির ভবিষ্যৎ গড়ার কারিগররা যেভাবে রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে খেয়ে-না খেয়ে দাবি আদায়ে রাজপথকে বেছে নিয়েছেন, তা আমাদের কষ্ট দেয়। সুশিক্ষিত জাতি হিসাবে তা লজ্জাজনকও বটে। রাজধানীর প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থানরত শিক্ষকদের প্রতি সরকার নমনীয় মনোভাবের পরিচয় দিয়ে তাদের বাড়ি ফেরাতে উদ্যোগী হবে-এটাই প্রত্যাশা।