সড়কে অব্যাহত নৈরাজ্য: কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বারবার আলোচনায় এলেও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোয় যানবাহন চলাচলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না। ফলে দুর্ঘটনার ব্যাপকতাও কিছুতেই রোধ করা যাচ্ছে না। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন মানুষ। মূলত শৃঙ্খলার অভাবে দুর্ঘটনায় পড়ছে সড়কে চলাচলকারী সব ধরনের যানবাহন, তা সে অ্যাম্বুলেন্সই হোক বা যাত্রীবাহী বাস অথবা পণ্য বহনকারী ট্রাকই হোক।
পাবলিক বাসগুলো দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে যেন সবার চেয়ে এগিয়ে। বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর রামপুরা ব্রিজের ইউলুপ থেকে হাতিরঝিল সড়কে নামার সময় ভিক্টর পরিবহণের একটি বাসের ধাক্কায় এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এ সময় জনতার ধাওয়া খেয়ে বাসটি বেপরোয়া গতিতে হাতিরঝিল সড়কে ঢুকে সেখানেও এক প্রতিবন্ধী শিশুকে পিষে মেরেছে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পুলিশ হেলপারসহ বাসটি জব্দ করলেও চালককে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
সড়কে এমন নৈরাজ্যজনক ঘটনা আগেও ঘটেছে। সঠিক নজরদারি আর কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় চালকের বেপরোয়া চালনায় এভাবেই অকালে প্রাণ দিতে হচ্ছে পথচারী আর যাত্রীদের।
রাজধানীতে সড়কের মাঝখানে যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী উঠানো-নামানো এক নিয়মিত চিত্র। ওভারটেক করার প্রবণতাও দেখা যায় সর্বত্র। সচেতনতা আর আইনের প্রয়োগের অভাবে পথচারীরাও নিয়ম ভাঙছেন। অনেক স্থানেই দ্রুতগতিতে চলা যানবাহনকে তোয়াক্কা না করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হতে দেখা যায় পথচারীদের। সড়কে নিয়ম মেনে চলাচলের বিষয়ে যেমন জনগণকে সচেতন করা প্রয়োজন, তেমনি যানবাহন চালকরা প্রশিক্ষিত কিনা, সেটিও দেখভাল করা জরুরি।
ট্রাফিক পুলিশ ও বিআরটিএ এসব ক্ষেত্রে কতটুকু কার্যকর ভূমিকা পালন করছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। প্রতিবছর বাজেটে সড়ক ও সেতু নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু নির্মাণ কাজগুলো দৃশ্যমান হলেও রক্ষণাবেক্ষণ ও মান উন্নয়নে কার্যত কোনো পদক্ষেপ সেভাবে চোখে পড়ে না। সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে যেভাবে জিরো টলারেন্সের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে, একইভাবে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টিকেও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যুক্ত করতে হবে।
অবাক করা বিষয় হচ্ছে, বিশ্বের প্রায় সব বড় শহরেই স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা থাকলেও আমাদের দেশে খোদ রাজধানীর সিংহভাগ সিগন্যালই পুলিশের ইচ্ছামাফিক হাতের ইশারায় পরিচালিত হয় এখনো। এছাড়া ভিআইপিদের যাতায়াতের সময় দীর্ঘক্ষণ সড়ক স্থবির থাকার বিষয়টি তো আছেই।
ফলে সময়ের সঙ্গে জীবনের তাল মেলাতে গিয়ে পথচারীরা যেমন একদিকে নিজের অজান্তেই মস্তবড় ঝুঁকি নিয়ে ফেলেন, অপরদিকে গণপরিবহণ চালকরাও অর্থলোভে মেতে ওঠেন কে কার আগে যাবেন এ প্রতিযোগিতায়। ব্যক্তিগত গাড়ির চালকরাও বিশৃঙ্খলার জন্ম দেন মাঝেমাঝে। সব মিলে কেউই সড়কের শৃঙ্খলা মানছেন না।
পরিবহণ খাতে সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ হলো দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করে প্রাণহানি কমানো। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এ খাতে শৃঙ্খলার যে তিন নিয়ামক অর্থাৎ সড়ক, যানবাহন এবং দক্ষ চালক-এর কোনোটিই ক্রটিমুক্ত নয়। আবার আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এ খাতকে সুশৃঙ্খল রাখার ব্যবস্থাও কার্যকর নয়। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব একটি বড় বাধা। ফলে বিশৃঙ্খলার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে পরিবহণ খাত। এ ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকার জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেবে-এটাই প্রত্যাশা।