ভূমি অধিগ্রহণের আইন লঙ্ঘন
জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
যে কোনো দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রচলিত অধিগ্রহণ আইন অনুসারে ব্যক্তিমালিকানাধীন বা দখলাধীন ভূমি অধিগ্রহণ করে থাকে সরকার। অন্য দেশের ক্ষেত্রে যাই হোক না কেন, আমাদের দেশে জমির মালিকদের জন্য ‘ভূমি অধিগ্রহণ’ শব্দটি যেন এক আতঙ্কের নাম।
অভিযোগ আছে, ভূমি অধিগ্রহণ শাখার অনিয়ম-দুর্নীতি এবং আইনগত ফাঁকফোকরের কারণে জমির মালিকরা সঠিক উপায়ে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারেন না।
মঙ্গলবার যুগান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এর সত্যতাও মিলেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অধিগ্রহণের মূল্য জমির প্রকৃত মূল্য থেকে কম হওয়ায় যারা আইনের আশ্রয় নেন, মামলা নিষ্পত্তির পর সেই টাকা আর তাদের ভাগ্যে জোটে না। এমনই ৭ হাজার ১২৯ জন জমির মালিকের অধিগ্রহণের পাওনা ৪ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আটকে আছে। দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে এ টাকা কোষাগারে পড়ে থাকলেও ভুক্তভোগীদের হাতে তা পৌঁছেনি। দীর্ঘদিন ঝুলে থাকায় অনেকে টাকার আশা ছেড়েও দিয়েছেন।
দেশের প্রচলিত আইনে জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে সরকারের সঙ্গে কোনো মামলা হলে ক্ষতিপূরণের অর্থ স্থগিত করা হয়। পরে রায় মোতাবেক তার নিষ্পত্তি হয় এবং ভূমি মালিককে প্রাপ্য অর্থ পরিশোধ করা হয়। কিন্তু সরকারের এক নথিতে (নিরীক্ষা) এমন তথ্য মিললেও বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় কোনো সঠিক উত্তর দিতে পারেনি, যা অনাকাঙ্ক্ষিত। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী, যাদের জমি অধিগ্রহণ হয়েছে, ক্ষতিপূরণ পাওয়া তাদের অধিকার। সেখান থেকে বঞ্চিত করার অধিকার রাষ্ট্রের নেই। মনে রাখতে হবে, জমি অধিগ্রহণ হলে এমনিতেই জমির মালিক হতাশায় ভোগেন। তাই যথানিয়মে ন্যায্য পাওনা তাদের পরিশোধ করা উচিত। শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রামই নয়, সারা দেশে ক্ষতিপূরণ পরিশোধের এই দীর্ঘসূত্রতা উদ্দেশ্যমূলক বা অনিচ্ছাকৃত কিনা, সরকারকে তাও খতিয়ে দেখতে হবে।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অধীনে আটকে থাকা অর্থ কোথায় আছে, সেটিরও অনুসন্ধান করতে হবে। একইসঙ্গে আইন লঙ্ঘনকারীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। অনেকেই জানেন না ক্ষতিপূরণের টাকা কীভাবে আদায় করতে হয়। ক্ষতিপূরণ আদায়ে প্রয়োজনীয় প্রমাণাদির বিষয়টিও অনেকের অজানা। ফলে জমি অধিগ্রহণের কারণ এবং ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ছাড়াও এ প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতনতামূলক কার্যক্রম আরও বেগবান করা প্রয়োজন বলে মনে করি আমরা।