বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য কমছে
স্থানীয় বাজারে বাড়ছে কেন?
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ভোক্তাদের যখন দম বন্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তখনো নানা অজুহাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফা করে মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে চলেছে। এক্ষেত্রে মানুষের দুর্ভোগ কমানোর দায়িত্বে যারা রয়েছেন তাদের তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। লক্ষ করা যায়, কোনো পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বৃদ্ধি পেলে তখনই স্থানীয় বাজারে এর প্রভাব পড়ে। কিন্তু কোনো পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে হ্রাস পেলে স্থানীয় বাজারে এর প্রভাব পড়ে দেরিতে। শুধু তাই নয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেও দেশের বাজারে উলটো চিত্র লক্ষ করা যায়। জানা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে এক বছরের ব্যবধানে চিনি ছাড়া প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম কমেছে গড়ে ২১ শতাংশ। কিন্তু স্থানীয় বাজারে পণ্যের দাম গড়ে বেড়েছে প্রায় ৩২ শতাংশ। ব্যবসায়ীরা অজুহাত দিচ্ছেন বেশি দামে ডলার কিনে পণ্য আমদানি করা এবং দেশে জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দামসহ বিভিন্ন সেবার মূল্য ও ফি বাড়ানোয় উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এসব কারণে পণ্যের দাম কমানো যাচ্ছে না।
আমরা জানি, দেশে ডলারের দাম বৃদ্ধিতে আমদানি খরচ কিছুটা বেড়েছে। প্রশ্ন হলো, আন্তর্জাতিক বাজারে যেভাবে পণ্যের দাম ও জাহাজ ভাড়া কমেছে, এর প্রভাব দেশের বাজারে পড়ছে না কেন? বাজার তদারকির দায়িত্বে থাকা সরকারি সংস্থাগুলো এসব বিষয়ে সোচ্চার হচ্ছে না কেন? ভোক্তারা মনে করেন, বাজার তদারকির দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলো সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে আন্তর্জাতিক বাজারদরের সঙ্গে দেশের বাজারের দামের সমন্বয়ের কাজটি কঠিন নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম কমার প্রভাব দেশে না পড়ার মূল কারণ কার্যকর বাজার ব্যবস্থাপনার অভাব। লক্ষ করা গেছে, যেসব পণ্য দেশে উৎপাদন হয় ভরা মৌসুমেও সেসব পণ্যের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। প্রশ্ন হলো নিত্যপণ্যের বাজারের অস্থিরতা অব্যাহত থাকলে স্বল্প ও সীমিত আয়ের মানুষের বেঁচে থাকার উপায় কী?
লক্ষ করা যায়, রাজধানীসহ সারা দেশের হাটবাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রায় সব ধরনের পণ্য বেশি দামে বিক্রি হয়। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে প্রতি সপ্তাহে কোনো না কোনো পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। গত কয়েক মাস ধরে মসলাসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের বাজারে যে ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বাজার তদারকি সংস্থার অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে অসাধু ব্যবসায়ীদের আঁতাতের বিষয়টি বহুল আলোচিত। কাজেই সরষের ভেতরের ভূত তাড়ানোর জন্য কর্তৃপক্ষকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। পণ্য ও সেবার দাম যাতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে, সেজন্য সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে।