শাহজালালে ঝুঁকিপূর্ণ রানওয়ে, কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের একটি পূর্বশর্ত ঝুঁকিমুক্ত রানওয়ে। রানওয়ের ত্রুটির জন্য আগে একাধিক বিমান দুর্ঘটনার নজির আছে। সম্প্রতি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
শনিবার যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, রাজধানীর একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটির রানওয়ে পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে ঝাড়ু দিয়ে। এ পরিচ্ছন্নতার কাজে স্বয়ংক্রিয় তিনটি সুইপিং গাড়ি ব্যবহারের কথা থাকলেও সবকটি অকেজো হয়ে গ্যারেজে পড়ে আছে। এর মধ্যে দুটি গাড়ি আবার নষ্ট হয়ে গ্যারেজে পড়ে আছে দীর্ঘ ৭ বছর ধরে।
গত বছরের ডিসেম্বরে বিমানবন্দরটির নির্বাহী পরিচালক জরুরিভিত্তিতে দুটি অত্যাধুনিক সুইপার গাড়ি ক্রয়ের জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক) চিঠি দিলেও তা এখনো কার্যকর হয়নি। এমনকি এ নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথাও নেই। বিষয়টি উদ্বেগজনক।
জানা গেছে, বিষয়টিকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করায় বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অরগানাইজেশনকে (আইকাও) চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা বলছে, একটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০-ইআর এয়ারক্রাফটের দাম ১২শ থেকে ১৫শ কোটি টাকা। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ঝুঁকিপূর্ণ রানওয়ের কারণে যদি কোনো এয়ারক্রাফট দুর্ঘটনায় পড়ে সেজন্য সিভিল এভিয়েশন দায়ী থাকবে। আইকাও’র নিয়ম অনুযায়ী বিমানবন্দরের রানওয়ে নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হয়। বিমানবন্দরের ক্যাটাগরি আপডেট করার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরাও এরকম পরিস্থিতিকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন। তাদের মতে, বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের পর দ্রুতগামী সুইপিং গাড়ির মাধ্যমে রানওয়ে পরিষ্কার করাই নিয়ম। এছাড়া সপ্তাহে অন্তত দুবার ফ্লাইট অপারেশন বন্ধ রেখে রানওয়ে ক্লিন করতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে বেবিচকের পক্ষে এত বড় রানওয়ে ম্যানুয়ালি ঝাড়ু দিয়ে সচল রাখা সম্ভব নয়। তাছাড়া ঝাড়ু দিয়ে সব ধরনের আবর্জনা পরিষ্কার করাও সম্ভব নয়। উলটো এটি আরও বড় ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অক্টোবর থেকে চালু হবে শাহজালালের থার্ড টার্মিনালের একটি অংশের অপারেশনাল কার্যক্রম। তখন বিমানবন্দরের আয়তন হবে দ্বিগুণ। এ অবস্থায় যে কোনো সময় বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণে। আমরা জানি, দেশের আটটি বাণিজ্যিক বিমানবন্দরের উন্নয়নে সরকার প্রায় ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা ব্যয় করছে এবং এই নতুন সুবিধাগুলো চলতি বছরের অক্টোবর থেকে পর্যায়ক্রমে চালু হওয়ার কথা। চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ, কক্সবাজারে দেশের দীর্ঘতম রানওয়ে স্থাপন, ছয়টি বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ, কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রাথমিক সুযোগ-সুবিধার উন্নয়ন। সংশ্লিষ্টদের আশা, এসব কার্যক্রমের ফলে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে সেবার মানোন্নয়ন এবং উড়োজাহাজ ও যাত্রীধারণ সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যেখানে বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের স্বার্থে রানওয়ে পরিষ্কারের জন্য থাকা অতি প্রয়োজনীয় তিনটি সুইপিং গাড়ির সবকটি অকেজো হলেও কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ, সেখানে সেবার মানোন্নয়ন কীভাবে সম্ভব? কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় কে নেবে? বিষয়টি নিয়ে দেশি-বিদেশি বিমান পরিচালনা সংস্থাগুলোও কি স্বস্তিবোধ করছে? নিরাপত্তার স্বার্থেই কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে অতিদ্রুত রানওয়েটি পরিষ্কারের ব্যবস্থা নেবে, একইসঙ্গে বিমান উঠানামা এবং যাত্রীদের সেবা ও নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট সব বিষয় খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে, এটাই প্রত্যাশা।