বিসিআইসিকে আদালতের নির্দেশ: সার আত্মসাৎকারীদের বিচার হোক
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
৫৮২ কোটি টাকার সার আত্মসাতের ঘটনায় বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল না করায় হাইকোর্ট যে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন, তাকে যথার্থ বলে মনে করি আমরা। কারণ ওই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল না করায় দুর্নীতিবাজদের শাস্তি হয়নি, বরং তারা আরও উৎসাহিত হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ইউরিয়া সার আমদানির জন্য মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি দেশের সঙ্গে চুক্তি করেছিল সরকার।
এ সার পরিবহণের জন্য ড্রাই বাল্ক শিপিং প্রাইভেট লিমিটেডের স্থানীয় প্রতিনিধি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পোটন ট্রেডার্সের সঙ্গে ১৩টি চুক্তি করে সরকার। চুক্তি অনুযায়ী বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে সার আমদানির পর জাহাজ থেকে খালাস করে তা সরকারি গুদামে পৌঁছে দেওয়ার কথা এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের।
আমদানি করা সারের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ২৪৪ টন। কিন্তু গুদামে সরবরাহ করা হয় ৩ লাখ ২১ হাজার ৩২৮ টন সার। অর্থাৎ বিদেশ থেকে আনা হলেও ৭১ হাজার ৯১৬ টন সার গুদামে দেওয়া হয়নি। অভিযোগ আছে, এসব সার বেসরকারিভাবে বিক্রি করে দিয়েছে পোটন ট্রেডার্স। ইতঃপূর্বে দেশে যে সার সংকট দেখা দিয়েছিল, তার পেছনে কারখানাকেন্দ্রিক একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা দায়ী বলে অভিযোগ উঠেছিল।
এ সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক হিসাবে যার নাম এসেছিল, তিনি সাবেক সংসদ-সদস্য এবং বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কামরুল আশরাফ খান পোটন। উদ্বেগের বিষয় হলো, এই একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে সার আত্মসাতের। পোটন ট্রেডার্স তারই প্রতিষ্ঠান। প্রশ্ন হলো, প্রভাবশালী ব্যক্তি বলেই কি সার আত্মসাতের ঘটনার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়নি?
সময়মতো সার প্রাপ্তির সঙ্গে দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন তথা খাদ্যনিরাপত্তার মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় জড়িত। তাই সার নিয়ে যে বা যারাই কোনো অপতৎপরতায় লিপ্ত হোক না কেন, তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এ ব্যাপারে কোনোরকম শৈথিল্য কাম্য নয়। সার আত্মসাৎ ঘটনার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদালত ৯ জুলাই সময় নির্ধারণ করে আদেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনকে এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আমরা আশা করব, এর মধ্য দিয়ে সার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতরা চিহ্নিত হবে এবং তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে।