কেন এই নৃশংসতা?
সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ করতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতীকী ছবি
দেশে সম্প্রতি বিনা কারণে বা তুচ্ছ কারণে যেভাবে পৈশাচিক কায়দায় হত্যাকাণ্ড ঘটছে, তা উদ্বেগজনক। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, এসব অপরাধ থামাতে আশপাশের মানুষ এগিয়ে না এসে বরং মোবাইল ফোনে ভিডিওচিত্র ধারণ করতে ব্যস্ত থাকে। সমাজের এ চিত্র হতাশাজনক। গত মঙ্গলবার কুমিল্লার দাউদকান্দিতে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে হুইলচেয়ারে বসা এক বৃদ্ধকে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে তারই ফুপাতো ভাই। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। জানা গেছে, হত্যাকারী পেশায় পল্লিচিকিৎসক। প্রাণ বাঁচানো যার কাজ, তিনি কীভাবে এমন নিষ্ঠুর কাজ করতে পারলেন, সেটাই প্রশ্ন। এর আগের দিন রাজধানীর মিরপুরে খাবার খেয়ে ১০০ টাকার ছেঁড়া নোট দেওয়া নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে এক ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে কয়েকজন যুবক। সামান্য বিষয়ে প্রায়ই এমন ঘটনা সমাজে ঘটতে দেখছি আমরা।
মনোবিজ্ঞানী সিগমন্ড ফ্রয়েড বলেছেন, ‘মানুষ সভ্যতার মুখোশ পরে আছে। প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই পশুত্ব রয়ে গেছে।’ তবে কি আমাদের সমাজেও মানুষের পশুত্ব মুখোশ খুলে বেরিয়ে এসেছে সভ্যতার আলোয়? লোপ পেয়েছে আমাদের মানবিকতা? কিন্তু কেন? মনোবিজ্ঞানীরা এর সঠিক কারণ বলতে পারবেন। তবে এটা বোধগম্য যে, মূল্যবোধের অভাবে মানুষের সম্পর্ক জটিল হয়ে যাচ্ছে। মানুষে মানুষে পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস কমছে, কমে যাচ্ছে মমত্ববোধ। এছাড়াও বেশকিছু কারণে পারিবারিক কোন্দল ও খুনের ঘটনা ঘটছে। এ অবক্ষয় রোধ করতে পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করতে হবে।
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, মানুষের পাশবিকতার যে প্রকাশ ঘটছে, তা একদিনে হয়নি। অপরাধ করে দিনের পর দিন অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। এর ফলে মানুষের ভেতর হতাশা তৈরি হয়। মানুষ নিজেই আইন হাতে তুলে নিতে চায়। এ প্রবণতার অবসান ঘটাতে হবে। সেজন্য আমাদের বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে অপরাধীর কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ক্ষুদ্র হোক কিংবা বড়, এ ধরনের নিষ্ঠুরতা দেখানোর আগে তারা দুবার ভাবতে বাধ্য হয়। সর্বোপরি সমাজের ভেতরে যে অস্থিরতা, এর অবসান ঘটাতে হবে। এক্ষেত্রে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নয়, সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে।