বাজারে উত্তাপ, সরকারকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিশ্ববাজার পরিস্থিতি বর্তমানে ক্রমেই সহনীয় হয়ে এলেও আমাদের দেশে এখনো তা ঊর্ধ্বমুখী। বিশ্ববাজারের সঙ্গে সংগতি রেখে গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেলের দাম সেভাবে পুনর্নির্ধারণ করা হয়নি।
একই সঙ্গে নিত্যপণ্যের দাম হ্রাস পাওয়া দূরের কথা, দিনদিন বাড়ছে। তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষের এ যুগে দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে বিশ্ববাজার পরিস্থিতি এখন সবারই মোটামুটি জানা হয়ে যায়। ফলে আমদানিনির্ভর পণ্যমূল্যের অযৌক্তিক ঊর্ধ্বগতি একদিকে যেমন নিু ও মধ্যবিত্তের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়াচ্ছে, তেমনই তাদের মনে ক্ষোভেরও সঞ্চার করছে।
দেশে উৎপাদিত ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। দেখা যাচ্ছে, কৃষিপণ্যে মাঠ পর্যায়ের কৃষক কাঙ্ক্ষিত মূল্য পাচ্ছেন না। অপরদিকে মধ্যস্বত্বভোগী ও পাইকাররা কল্পনাতীত মুনাফা লাভ করছেন। সরকারের সুষ্ঠু নজরদারি আর পদক্ষেপের অভাবে খুচরা ব্যবসায়ীরাও অযৌক্তিক দামে পণ্য বিক্রি করছেন। মূল্য কারসাজির প্রকাশ্য অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান পরিচালনা করেও কার্যত দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। এর ওপর আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারের আয় বাড়াতে নিত্যপণ্যের ওপর বাড়তি কর আরোপের ঘোষণা যেন মুনাফাখোরদের উৎসাহের পালে হাওয়া জুগিয়েছে। বাজেট ঘোষণার পর থেকেই বাজারে এর প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। মাছ-মাংস, তরিতরকারি থেকে শুরু করে সব ধরনের নিত্যপণ্যে অস্বাভাবিক দর হাঁকা হচ্ছে। অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে প্রতিটি ভোগ্যপণ্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। যাদের কিছু সঞ্চয় আছে, তারা তাও ভেঙে ফেলছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।
বাজার কারসাজি প্রসঙ্গে খোদ সরকারের মন্ত্রী পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, এর পেছনে মধ্যস্বত্বভোগী ও সিন্ডিকেট জড়িত। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও বলছে, দেশে পেঁয়াজ, আদাসহ সব পণ্যের যে মজুত আছে, তাতে কুরবানির ঈদের আগে সংকট হওয়ার কথা নয়। পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়াচ্ছে। সম্প্রতি পেঁয়াজের অযৌক্তিক দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে আমদানির হুমকি দেওয়া হলে কিছুদিনের জন্য তা সহনীয় হয়। কিন্তু কিছুদিন বাদেই পরিস্থিতি আগের অবস্থায় ফিরে যায়। এভাবে কিছু পণ্যের দাম সরকার বেঁধে দেওয়ার পরও যে তা কার্যকর হচ্ছে না, এটা বাজার ব্যবস্থাপনার বড় সমস্যা। সব মিলে এখন বাজারব্যবস্থায় সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে। ভোক্তা অধিকারসহ বাজার ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোকে লোক দেখানো তদারকি থেকে বেরিয়ে এসে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে পণ্যমূল্যে যে হারে কর আরোপ করা হয়েছে, তা জনবান্ধব নয়। এর ফলে বাজারে যে প্রভাব পড়েছে, সরকারকে তা আমলে নিতে হবে। অসৎ ব্যবসায়ীর কারসাজি, অতি মুনাফার প্রবণতা এবং সিন্ডিকেট ও মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কাটাতে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। ব্যবসায়ীদের নানা সুযোগ-সুবিধা সরকার বিভিন্নভাবে দিয়ে গেলেও তার সুফল জনগণ পাচ্ছে না। ফলে যতই উন্নয়নের কথা বলা হোক, সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা যদি সহজ না হয়, সাধ্য ও আয়ত্তের মধ্যে না আসে, তাহলে এসব উন্নয়ন অনেকের কাছেই অর্থহীন হবে। তাই মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে সরকার আন্তরিক হবে-এটাই প্রত্যাশা।