অহেতুক বিদেশ সফরের প্রস্তাব: জনগণের অর্থের অপচয় বন্ধ করতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চলমান অর্থনৈতিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে কৃচ্ছ্রসাধনে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও এবার ফুল চাষ শিখতে বিদেশ সফরের বিষয়ে প্রস্তাব এসেছে। গতকাল প্রকাশিত যুগান্তরের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ‘ফুল গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন’ শীর্ষক কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পে এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
দেখা যাচ্ছে, অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে এবং ডলারের ওপর চাপ কমাতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশ সফরের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরও তা থেমে নেই। এর আগে পুকুর ও খাল উন্নয়ন, ঘি-মাখন তৈরি, ঘাস চাষ, সাঁতার শেখা, মাশরুম চাষ শেখা ইত্যাদি খাতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বা সফরের প্রস্তাব সংক্রান্ত খবর গণমাধ্যমে এসেছে। এমনকি চলতি বছরও মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক মাছচাষ শিখতে বিদেশ ভ্রমণের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাতে আমরা দেখেছি।
গত বছরের ১২ মে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক পরিপত্রে বলা হয়, ‘কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব প্রকার এক্সপোজার ভিজিট, স্টাডি ট্যুর, এপিএ ও ইনোভেশনের আওতাভুক্ত ভ্রমণ এবং ওয়ার্কশপ, সেমিনারে অংশগ্রহণসহ সব ধরনের বৈদেশিক ভ্রমণ বন্ধ থাকবে।’
এরপর অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় ব্যবস্থাপনা শাখার আরেক পরিপত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি স্বায়ত্তশাসিত, আধা সরকারি প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি, ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ সীমিত করার কথা বলা হয়। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক সংকট দেখা দিলে চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং সরকারি কর্মকর্তাদের এ ধরনের ‘অহেতুক’ সফর বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।
সরকারি প্রকল্পের অধীনে কর্মকর্তাদের অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফর নিয়ে সমালোচনা থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখানোয় আমরা উদ্বিগ্ন। এর আগেও অনেকবার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে। বিদেশ সফরের বিষয়ে যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, আদতে তা অনেকটাই অকার্যকর। খরচ বাড়ার কারণে হয়তো কখনো কখনো প্রকল্প কর্মকর্তাদের তিরস্কার করা হয়। কিন্তু বিদেশ সফরে যাওয়ার প্রহসনমূলক চর্চা বন্ধ হয়নি। কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় বিভিন্ন মহলে সুসম্পর্ক বজায় রাখেন এমন কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে ‘প্রশিক্ষণের’ জন্য সরকারি খরচে বিদেশ সফর এক ধরনের বিশেষ সুবিধা বা ‘উপহারে’ পরিণত হয়েছে। সরকার এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেবে এবং জনগণের অর্থ অপচয়ের সঙ্গে জড়িত সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনবে-এটাই প্রত্যাশা।