ত্রাণ ও পুনর্বাসন জরুরি
ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখার গতিপ্রকৃতি দেখে আবহাওয়াবিদরা আশঙ্কা করছিলেন, এটি ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডরের মতো ভয়ংকর হবে। কক্সবাজার, টেকনাফসহ উপকূলীয় অঞ্চলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও হবে ব্যাপক। তবে ঘূর্ণিঝড় মোখা গতি পরিবর্তন করায়, সেই সঙ্গে দেশের উপকূল অতিক্রমের সময় সাগরে ভাটা চলার কারণে বড় ধরনের জলোচ্ছ্বাস থেকে বেঁচে গেছেন স্থানীয়রা। দেশের অন্যান্য উপকূলীয় জেলা-উপজেলায় মোখার প্রভাবে ঝড়বৃষ্টি হলেও বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি, যা স্বস্তিদায়ক।
তবে মোখার ছোবলে তছনছ হয়ে গেছে সেন্টমার্টিন, শাহ পরীর দ্বীপ ও টেকনাফের কয়েক হাজার ঘরবাড়ি। উপড়ে পড়েছে গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি। সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে কয়েকটি গ্রাম ভেসে গেছে। যুগান্তরের ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে জানা গেছে, মোখার আঘাতে কক্সবাজার জেলায় ১০ হাজার ৪৬৯টি কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফসল ও বিভিন্ন ফসলি বাগানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের ১২০০ ঘর পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। জেলা প্রশাসন সূত্র বলছে, পুরো জেলায় পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে ২ হাজার ৫২২টি ঘর। মোখার আঘাতে দুর্গত মানুষের সংখ্যা ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৬২০, যাদের পুনর্বাসন এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রাণহানি না ঘটলেও যারা আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে দ্বীপের কয়েকশ গাছপালা ভেঙে গেছে। দ্বীপের মাঝরপাড়া, কোনারপাড়া, গলাচিপা, দক্ষিণপাড়া, পশ্চিমপাড়া, উত্তরপাড়া প্লাবিত হয়েছে; অধিকাংশ ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমের সময় আশ্রয়কেন্দ্র, কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ৩৭টির বেশি হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজে অবস্থান করেন স্থানীয় প্রায় ৬ হাজার মানুষ, যাদের বেশির ভাগই শিশু। অবশ্য কক্সবাজার ছাড়া চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, সিলেট, হাতিয়া, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, রাজশাহীসহ দেশের কোথাও তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি মোখা। জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ের পর উপকূলীয় এলাকার গৃহহীন মানুষ তাদের গবাদি পশু নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের দেখভালের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মোখার সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষায় চট্টগ্রাম ও অন্যান্য জেলার প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার প্রস্তুতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি হিসাবে শুক্রবার রাত থেকেই সবাইকে কাজ করতে দেখা গেছে, যা প্রশংসনীয়।
তবে প্রাণহানি না ঘটলেও ঘূর্ণিঝড়ে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা অবশ্যই আমলে নিতে হবে। দুর্গত এলাকায় ঘরবাড়ি, জমির ফসল হারিয়ে যারা দিনাতিপাত করছেন, তাদের পুনর্বাসনে প্রশাসনকে নিতে হবে কার্যকর ব্যবস্থা। উপকূলীয় এলাকার মানুষের মন থেকে আতঙ্ক কেটে গেলেও স্বস্তির যে অভাব রয়েছে, তা দূর করতে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামোগত যে ক্ষতি হয়েছে, সেসব মেরামতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে ফসল এবং ফসলি বাগানের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণ করে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে কর্তৃপক্ষকে দাঁড়াতে হবে। দুর্গতরা যাতে দ্রুত বাড়িঘরে এসে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারে, সে ব্যাপারে প্রশাসন উদ্যোগী হবে, এটাই প্রত্যাশা।