Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

বিদেশি বিনিয়োগ

বাধাগুলো দূর করার পদক্ষেপ নিতে হবে

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিদেশি বিনিয়োগ

প্রতীকী ছবি

দেশে বিদেশি বিনিয়োগে উৎসাহ ও পরিবেশ তৈরির চেষ্টা সত্ত্বেও আশানুরূপ ফল মিলছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে এ হার ৩১ থেকে ৩৩ শতাংশের ওপরে উঠছে না। কিন্তু এমন পরিস্থিতির কারণ কী? বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদন ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে যুগান্তরের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগে সাতটি সবচেয়ে বড় বাধা রয়েছে। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে দুর্নীতি। এর পরেই আছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দিতে আইনের দ্রুত প্রয়োগের অভাব। এরপর একে একে আছে সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও মাত্রাতিরিক্ত সময়ক্ষেপণ, দুর্বল অবকাঠামো ও গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট, জমির অভাব ও ক্রয়ে জটিলতা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বড় অঙ্কের ঋণ জোগানে সক্ষমতার অভাব এবং স্থানীয়দের সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের যোগসূত্র ও সমন্বয়ের অভাব। এর বাইরেও বিনিয়োগকারীরা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সুশাসনের অভাবকে দায়ী করেছেন।

গত বছরের মাঝামাঝি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক প্রতিবেদনেও বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি বড় বাধা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। যেখানে বলা হয়, প্রায় সব স্তরেই দুর্নীতি বিদেশি বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করছে। এছাড়া বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আইনের দুর্বল প্রয়োগ, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দুর্বল অবকাঠামো ও বড় অঙ্কের ঋণ বিতরণের সক্ষমতার অভাবকে অন্যতম সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।

দেশি বিনিয়োগকারীদের হাত ধরেই বিদেশি বিনিয়োগ আনা সহজ হলেও উদ্যোক্তাদের মতে, কারখানা চালাতে স্থানীয় পর্যায়ে বড় অঙ্কের চাঁদা দিতে হয়। এর ওপর কেন্দ্রীয় অফিসের নানা ঘাটে চাঁদার চাহিদা মেটাতে গিয়ে খরচ যায় বেড়ে। আবার বিদেশি বিনিয়োগের একটি বড় অংশ দেশের সরকারি পর্যায়ে যোগাযোগের মাধ্যমে হলেও বিনিয়োগের জন্য বিভিন্ন সরকারি সংস্থা থেকে অনুমোদন নিতে গিয়ে দুর্নীতির কারণে বাধে যত বিপত্তি। জমি, অবকাঠামোগত সমস্যা তো আছেই, তার ওপর কারখানা চালাতে চড়া দামে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি কিনলেও প্রকট সংকটের কারণে নিরবচ্ছিন্নভাবে এগুলোর সরবরাহ মিলছে না। তাই অনেকে উৎসাহ নিয়ে এগিয়ে এলেও পিছু হটেন।

কয়েক বছর আগে শিল্প মন্ত্রণালয় বিনিয়োগের জন্য ১৬টি বাধা চিহ্নিত করেছিল। কিন্তু এসব বাধা দূর করতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তেমন কোনো কার্যকর ফল আসেনি। অবশ্য বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) থেকে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের আওতায় ৫০ ধরনের সেবা দেওয়ায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত জটিলতা বেশ কিছুটা কমেছে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে নানা দুর্নীতির সুযোগ রয়ে যাওয়ায় এসব সেবা পেতে বিলম্ব হচ্ছে।

আমরা মনে করি, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর সুযোগ থাকলেও এসব সমস্যার দ্রুত সমাধান না করায় বিনিয়োগের দুয়ার খুলছে না। এদিকে দেশি উদ্যোক্তাদের হাত ধরে সাধারণত বিদেশি বড় বিনিয়োগ এলেও তারা যৌথভাবে কারখানা করতে আগ্রহী নন। ফলে বিনিয়োগ সম্মেলন, আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমে বিদেশি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলেও তাতে বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না।

যেহেতু দেশি বিনিয়োগকারীদের হাত ধরেই বিদেশি বিনিয়োগ আনা সহজ, তাই সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি দেশি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বিদেশি উদ্যোক্তাদের একটি সেতুবন্ধ গড়ে তুলতে পারলেই বিদেশি বিনিয়োগ আসা সহজ হবে। দেশে বিদেশি বাড়ানোর লক্ষ্যে সব ধরনের বাধা দূর করা সর্বাত্মক চেষ্টা নেওয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম