রেললাইন বেঁকে যাওয়া
কারণ যাই হোক, রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার জরুরি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৫ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কাছে একাধিকবার রেললাইন বাঁকা হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা তৈরি হয়। তাই ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে রেল যোগাযোগ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়।
কোনো কোনো রেল কর্মকর্তা এই রেললাইন বাঁকা হওয়ার জন্য প্রচণ্ড গরমকে দায়ী করে বলেছেন, রোদের তাপে রেললাইন বাঁকা হচ্ছে। প্রশ্ন হলো, গরমের কারণে বা রোদের তাপে কি রেললাইন বেঁকে যেতে পারে? যদি তাই হয়, তাহলে দেশের সব জায়গায় কেন একই ঘটনা ঘটছে না?
এমনকি বেঁকে যাওয়া লাইনের পাশের লাইনটি কেন বাঁকা হচ্ছে না? লাইন বাঁকা হওয়ার ঘটনা ঘটেছে পূর্বাঞ্চলীয় রেলে; অথচ পশ্চিমাঞ্চলে যেখানে তাপমাত্রা আরও বেশি, সেখানে কেন লাইন বাঁকা হচ্ছে না? আরও প্রশ্ন, হাওড়-বিলের পাশ দিয়ে চলা উন্মুক্ত লাইন বাঁকা হচ্ছে না, অথচ সুবজ গাছপালা ঘেরা লাইন বাঁকা হচ্ছে কেন? বস্তুত বাংলাদেশ এত তীব্র তাপমাত্রার দেশ নয় যে রোদের তাপে রেললাইন বেঁকে যেতে পারে।
তাই বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, রেললাইন বেঁকে যাওয়ার কারণ রোদের তাপ নয়, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও ত্রুটি। তবে সূর্যের অতিরিক্ত তাপে রেললাইন একেবারেই বেঁকে যেতে পারে না, তা নয়। গত বছর ব্রিটেনে গরমের কারণে রেল চলাচল বিঘ্নিত হয়েছিল বলে জানা যায়। কাজেই আমাদের দেশে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার প্রকৃত কারণ কী তা চিহ্নিত করা জরুরি।
অস্বীকার করার সুযোগ নেই, দেশের রেললাইনগুলো দীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক স্থানে রেলপথের অবস্থা জরাজীর্ণ। প্রায়ই নাট, বোল্ট, ক্লিপ, ফিশপ্লেট ইত্যাদি খেলা থাকে। রয়েছে পাথরস্বল্পতা। ফলে প্রায়ই ঘটছে লাইনচ্যুতির ঘটনা। ঝুঁকিপূর্ণ লাইনের কারণে কমে গেছে রেলের গতি। অভিযোগ আছে, ঝুঁকিপূর্ণ রেলপথ মেরামতসহ কিছু প্রকল্প বাবদ কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের পরও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
জানা যায়, সারা দেশে বিদ্যমান রেলপথের অর্ধেকের বেশি এখনো চরম ঝুঁকিপূর্ণ। পাশাপাশি রেলব্রিজগুলোর অবস্থাও শোচনীয়। এ অবস্থায় রেললাইনগুলোর মেরামত ও সংস্কার জরুরি হয়ে উঠেছে। রেললাইনের নিয়মিত তদারকিও প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। দূর করতে হবে এ খাতে বিদ্যমান সব ধরনের দুর্নীতি ও অব্যবস্থা। মোট কথা, রেলের প্রকৃত উন্নয়নে দৃষ্টি দিতে হবে।
যোগাযোগের এ মাধ্যমটিকে গতিশীল, ঝুঁকিহীন ও আরামদায়ক করা গেলে রেলকে লাভজনক সংস্থা হিসাবে দাঁড় করানো অসম্ভব নয়। সরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে জরাজীর্ণ লাইন সংস্কার, চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ সেতু মেরামতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের পদক্ষেপ নেবে, এটাই কাম্য।