পথশিশু জরিপ
সুবিধাবঞ্চিতদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত পথশিশু জরিপ ২০২২-এ দেশের পথশিশুদের সার্বিক অবস্থার একটি চিত্র উঠে এসেছে। জরিপটি পরিচালনায় সহায়তা করেছে জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)। জরিপের তথ্য বলছে, দারিদ্র্য, সংসারে অশান্তি, খাদ্যের অভাবসহ নানা কারণে ঘর ছাড়ে শিশুরা। এই শিশুদের ৬৪ শতাংশই তাদের পরিবারের কাছে ফিরে যেতে চায় না।
৯২ দশমিক ১ শতাংশ ছেলেশিশু এবং ৮৪ দশমিক ৫ শতাংশ মেয়েশিশু বিভিন্ন শ্রমে জড়িত। ২০ দশমিক ৯ শতাংশ পথশিশু বর্জ্য কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। এছাড়া ভিক্ষা করে বা ভিক্ষায় সহায়তা করে ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ পথশিশু। জরিপের এসব তথ্যে পথশিশুদের চরম দুর্দশার চিত্রই উঠে এসেছে। ইতঃপূর্বে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ও ইউনিসেফের এক জরিপ থেকে জানা যায়,
বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে প্রায় ৩০১ ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত রয়েছে শিশুরা। হকারি, কুলিগিরি, রিকশাচালনা, পতিতাবৃত্তি, ফুল বিক্রি, আবর্জনা সংগ্রহ, ইট-পাথর ভাঙা, হোটেলের শ্রম, মাদকদ্রব্য বহন, ঝালাই কারখানার শ্রম ইত্যাদি কাজে শিশুদের নিয়োজিত করা হয় বেশি।
শিশুশ্রম মূলত দারিদ্র্যের ফল। পরিবারে অভাব-অনটনের কারণে শিশুরা অল্পবয়সেই শ্রমিক হতে বাধ্য হয়। অভাবের তাড়নায় বাবা-মা তাদের শিশু সন্তানকে পড়ালেখার জন্য স্কুলে পাঠানোর পরিবর্তে পাঠান আয়-রোজগার করতে। একসময় সেই শিশুরা আর পরিবারের কাছে ফিরে আসতে চায় না। শিশুশ্রম শিশুর স্বাভাবিক বেড়ে ওঠাকে বাধাগ্রস্ত করে। তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক, সামাজিক ও নৈতিক জীবন বিষিয়ে তোলে। তখন তারা হয়ে ওঠে অপরাধপ্রবণ। তাদের একটি অংশ মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধকর্মে জড়িয়ে পড়ে। এর ফলে সৃষ্টি হয় সামাজিক বিশৃঙ্খলা। তাই এ অবস্থার পরিবর্তন জরুরি।
আমরা যেন ভুলে না যাই শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ। তাদের স্বাভাবিক বিকাশ নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এক্ষেত্রে সবার আগে প্রয়োজন দারিদ্র্যবিমোচন। প্রত্যেক অভিভাবক যেন তার শিশু সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে পারেন এবং স্কুল থেকে শিশু যেন ঝরে না পড়ে, রাষ্ট্রকেই সে ব্যবস্থা নিতে হবে। জরিপে উঠে আসা তথ্যগুলো দেশের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটানোর উদ্দেশ্যে সঠিক নীতিমালা ও কর্মসূচি নির্ধারণে সহায়ক হবে-এটাই আমরা আশা করি।