ভবন ও শপিংমলে অগ্নিঝুঁকি: দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি নিয়ে অগ্রসর হতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
রাজধানীতে অগ্নিঝুঁকিতে থাকা মার্কেট, শপিংমল ও বাণিজ্যিক ভবনের তালিকা করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ। এ তালিকায় নামিদামি শপিংমলসহ ১ হাজার ৩০৫টি মার্কেট ও ভবন রয়েছে, যার মধ্যে ‘অতিঝুঁকিপূর্ণ’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে ৪৫০টিকে। এসব মার্কেট কর্তৃপক্ষ ও ভবন মালিকের কাছে সতর্কবার্তা পাঠাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ।
তবে এ তালিকায় রাজধানীর গাউছিয়া মার্কেট থাকলেও মার্কেটের অগ্নিঝুঁকি আমলে নিতে রাজি নন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। গত মঙ্গলবার বঙ্গবাজারে স্মরণকালের ভয়াবহ আগুনে আটটি মার্কেট পুড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করা সরকারি এ সংস্থার সাম্প্রতিক এ পদক্ষেপকে ‘গৎবাঁধা’ আখ্যা দিয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাধারণত বড় কোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে তা নিয়ে হইচই শুরু হয়, যা সময়ের ব্যবধানে স্তিমিত হয়ে যায়। ব্যবসায়ীদের এ ধরনের বক্তব্য অযৌক্তিক নয়।
অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, কোনো দুর্ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ সাধারণত হোতাদের বিরুদ্ধে মামলা, তদন্ত কমিটি ইত্যাদির আয়োজন করে কিছুদিন বেশ সরব ভূমিকা পালন করে। পরে বিষয়টি বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে লালবাগ এলাকার নিমতলীতে সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা স্মরণ করা যেতে পারে। ওই ঘটনায় অনেক মানুষ জীবন্ত দগ্ধ হয়েছিল। দুর্ঘটনার পর দাবি উঠেছিল, শুধু পুরান ঢাকা নয়, রাজধানীর কোনো আবাসিক এলাকায়ই যেন বিপজ্জনক কোনো রাসায়নিকের মজুত না থাকে। জনদাবির প্রেক্ষাপটে সরকার এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করলেও এর বাস্তবায়ন আজও হয়নি।
বস্তুত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা তৈরি করলেও আইনি দুর্বলতার কারণে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো ক্ষমতা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষের নেই। অবশ্য এক্ষেত্রে সংস্থাটিকে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বেশকিছু ক্ষমতা দিয়ে ২০১৪ সালে ‘অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন-২০০৩’-এর আওতায় একটি গেজেট প্রকাশ করা হয়েছিল। তবে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যবসায়ীর আপত্তির মুখে গেজেটটি স্থগিত করে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে ওই আইনের বিধিমালা সংশোধনের প্রস্তাব পাঠানো হলেও অজানা কারণে আজ পর্যন্ত তা আটকে আছে। প্রস্তাব অনুযায়ী সংশোধিত বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশিত হলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ অগ্নিঝুঁকিতে থাকা ভবন ও এর মালিকদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারবে।
দেশে অগ্নিকাণ্ডজনিত দুর্ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। এতে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতিসহ অনেক প্রাণহানিও ঘটছে। এ অবস্থায় অগ্নিকাণ্ড ও অন্যান্য দুর্যোগের সম্ভাব্য বিপদ ও ক্ষতি ন্যূনতম পর্যায়ে রাখতে দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি নিয়ে অগ্রসর হওয়া উচিত। সরকার প্রণীত ‘বিল্ডিং কোড’ মেনে ভবন নির্মাণ, রাজউকের অনুমোদিত নকশা বাস্তবায়নে কড়াকড়ি, নির্মিত ভবনের ঝুঁকি নিরূপণ করে প্রয়োজন অনুযায়ী ভবনের রেট্রোফিটিং ও একটি ‘কনটিনজেন্সি প্ল্যান’ (আকস্মিক দুর্ঘটনা মোকাবিলায় পূর্বনির্ধারিত পরিকল্পনা) তৈরি করতে হবে।
বিশ্বের অনেক দেশে অগ্নিকাণ্ড ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে উন্নত প্রযুক্তির সহায়তায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করার প্রযুক্তির ব্যবহার চালু হয়েছে। বাংলাদেশেও এ পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত। এছাড়া বিপদ মোকাবিলায় সাধারণ মানুষকে মানসিকভাবে প্রস্তুত রাখা এবং নিয়মিত মহড়া ও স্বেচ্ছাসেবক তৈরির ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে।