জিডিপি প্রবৃদ্ধি হ্রাসের পূর্বাভাস
দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ প্রয়োজন
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক এপ্রিল-২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে।
এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রতিষ্ঠানটি ৬ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল। এছাড়া চলতি অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৭ শতাংশ থাকার কথা বলা হয়েছে।
অন্যদিকে বিশ্বব্যাংক ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট-২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। ইতঃপূর্বে ২০২২ সালের অক্টোবরে বিশ্বব্যাংক বলেছিল, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে, যা জুনে একটু বাড়িয়ে ৬ দশমিক ৭ শতাংশের কথা বলা হয়েছিল। এছাড়া এডিবির মতে, চলতি অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৭ শতাংশ থাকবে। এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে আমাদের অর্থনীতিতে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, জিডিপি প্রবৃদ্ধি হ্রাস ও এর বিপরীতে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির পেছনে কোভিড-১৯ ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক মন্দার নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। বলা চলে, এটি আমাদের অর্থনীতিতে বেশ বড় রকমের আঘাত হেনেছে। এর প্রভাবে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে; সংগত কারণে কমেছে চাহিদাও। এতে পণ্য বিক্রি কমেছে। একই কারণে বিদেশের বাজারে পণ্যের চাহিদাও কমেছে। এ কারণে রপ্তানির অর্ডার ও আয় কমে গেছে। উপরন্তু প্রবাসীদের অর্থ পাঠানো কমে যাওয়ার বিষয়টিও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। অন্যদিকে জ্বালানি তেল, গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে মূল্যস্ফীতির চাপ বেড়েছে। তবে সরকার কোভিড পরিস্থিতি খুব ভালোভাবেই সামাল দিয়েছে। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক প্রতিকূলতার মধ্যেও তুলনামূলকভাবে ভালো ব্যবস্থাপনা করেছে। এছাড়া সব খাতেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে। এটি এই কঠিন সময়েও প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে সাহায্য করবে, আশা করা যায়।
বস্তুত প্রবৃদ্ধিনির্ভর করে দেশের মোট উৎপাদনব্যবস্থার ওপর। সরকার অবশ্য করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার উদ্দেশ্যে নানামুখী পদক্ষেপ ও উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সবচেয়ে বড় কথা, দেশে বর্তমানে এমন একটি বাস্তবতা তৈরি হয়েছে, সরকার যদি কিছু নাও করে, তাহলেও পাঁচ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে, যাকে ‘অটো পাইলট’ হিসাবে অভিহিত করা চলে। আশার কথা, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতোমধ্যে এ ধরনের অটো পাইলট তৈরি হয়েছে। আশাজাগানিয়া সংবাদ হলো, এডিবির মূল্যায়ন বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের অর্থনীতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়াবে, যার ফলে জিডিপির প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পেয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ হতে পারে। তবে করোনাকালীন ক্ষয়ক্ষতি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধির ঘরে পৌঁছতে চাইলে সরকারকে আরও বাস্তবধর্মী উদ্যোগ নিতে হবে। উদ্যোগী না হয়ে কেবল উচ্চাভিলাষ পোষণ করলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না বলেই ধারণা। নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যেও গত দুই দশকে আমরা মোটামুটি এগিয়েছি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনকারী জাতি হিসাবে কোনোমতে টিকে থাকাটা আমাদের চাওয়া হতে পারে না। আমাদের প্রত্যাশা হলো মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়ে স্বস্তিদায়ক অর্থনীতির মধ্যে বসবাস করা। দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সব ধরনের প্রতিকূলতা অতিক্রম করে সরকার আমাদের স্বপ্নের বাস্তব রূপায়ণ ঘটাতে সক্ষম হবে, এটাই প্রত্যাশা।