বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন
বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করুন
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমবাজারের শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। মূলত প্রাতিষ্ঠানিক কাজের অভাব ও দুর্বল অবকাঠামোর কারণে বাংলাদেশ প্রাতিষ্ঠানিক শ্রমবাজারে এগোতে পারছে না। উল্লেখ্য, অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমবাজারের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় লাও পিডিআর, তৃতীয় কম্বোডিয়া, চতুর্থ পাকিস্তান ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে ভারত। এমন কী এক্ষেত্রে আমাদের চেয়ে নেপাল, শ্রীলংকা ও মিয়ানমারের অবস্থান ভালো, যা মেনে নেওয়া কষ্টকর। এছাড়া শ্রমবাজারের অন্যান্য সূচকেও পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ, যা মোটেই কাম্য নয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, সরকারি খাতের কলেবর ছোট হওয়ার পাশাপাশি সেবা প্রতিষ্ঠানের জনবল ও বেসরকারি খাতের প্রাতিষ্ঠানিকতা কম হওয়ায় অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমবাজারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শীর্ষে রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা বেশি হলেও বেশিরভাগই অস্থায়ী কর্মে নিয়োজিত। এ কারণে আমরা কর্মক্ষম জনসংখ্যার সুফল ভোগ করতে পারছি না, যা মেনে নেওয়া কষ্টকর। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে দেশে কর্মের পরিবেশ উন্নয়নে আরও বেশি গুরুত্ব আরোপের তাগিদ দিয়ে বলা হয়েছে-বেসরকারি খাতের বিকাশ ঘটানোর লক্ষ্যে বিনিয়োগ-বাণিজ্যনীতিতে ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেলে প্রাতিষ্ঠানিক কাজের পরিসর বাড়বে। এতে দেশীয় শ্রমবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক কর্মীর হারও বাড়বে।
করোনা মহামারি সৃষ্ট পরিস্থিতি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্বমন্দার নেতিবাচক প্রভাব দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারেও পড়েছে। এতে পণ্যের চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় নতুন শিল্পকারখানা স্থাপিত হচ্ছে না। বিনিয়োগ কমে যাওয়া মানে কর্মসংস্থানের সুযোগও কমে যাওয়া, যা প্রাতিষ্ঠানিক শ্রমবাজারের জন্য অশনিসংকেত। এ অবস্থায় বিনিয়োগ পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটানো জরুরি। গত এক দশক ধরে আর্থিক ও সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রশংসনীয়। চলমান বিশ্বমন্দার মধ্যেও ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে মধ্যম আয়ের দেশ হতে চাই এবং ২০৪১ সালে উচ্চ আয়ের দেশে উত্তরণ ঘটাতে চাই। এ অভিপ্রায়ে নানা প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি সরকার নৌ, বিমান ও রেলপথের উন্নয়নেও বড় বড় প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে। তবে গৃহীত অনেক প্রকল্পেই নানারকম অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া বন্দর ও অবকাঠামো খাতে নানা ধরনের অব্যবস্থাপনা, দুর্বলতা ও অনিয়ম-দুর্নীতি বিরাজ করছে। এছাড়া অনেক সময় চাহিদা অনুযায়ী শিল্পপ্রতিষ্ঠানে নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করাও সম্ভব হচ্ছে না। প্রাতিষ্ঠানিক শ্রমবাজারের অবস্থা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে আনার লক্ষ্যে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হলে উপরোক্ত পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে হবে। পাশাপাশি দেশে আইনের শাসন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বাণিজ্য সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিতসহ ব্যবসা সম্পর্কিত নীতিমালা আরও সহজ করা প্রয়োজন।