সানেমের জরিপ
মূল্যস্ফীতিজনিত সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নিন
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অব্যাহত মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের সীমিত ও স্বল্প-আয়ের মানুষ কষ্টে আছে। করোনার প্রকোপ কমার পর বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি লক্ষ করা গিয়েছিল।
বিশ্ববাজারের ওই অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে স্থানীয় বাজারে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির চাপ আরও বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির চাপে দেশের প্রায় ৭৪ শতাংশ নিম্নআয়ের পরিবার ধার করে চলছে-এমন তথ্য উঠে এসেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) এক জরিপে।
জানা যায়, গত ছয় মাসে এসব পরিবারের ব্যয় বেড়েছে ১৩ শতাংশ; কিন্তু তাদের আয় বাড়েনি। জরিপকারীদের কাছে ১৮ শতাংশ পরিবারের লোকজন দাবি করেছেন, গত ৬ মাসে এমন কিছুদিন গেছে, যেদিন তাদের পুরো দিনও না খেয়ে থাকতে হয়েছে। পরিবারের কোনো সদস্য হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে নিম্নআয়ের মানুষের এমন পরিস্থিতিতে পড়ার বিষয়টি নতুন নয়।
এছাড়া পরিবারের কোনো সদস্যের বিশেষ চাহিদা পূরণ করা বা শিশুখাদ্য ক্রয় করা-এসব কারণে টাকা ফুরিয়ে গেলে হতদরিদ্র পরিবারের অন্য সদস্যদের নামমাত্র খেয়ে দিন পার করতে হয়। সানেমের গবেষণা তথ্যমতে, ৩৫ শতাংশ পরিবার তাদের সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে, আর সঞ্চয়বিমুখ হয়েছে ৫৫ শতাংশ পরিবার। জরিপে অংশ নেওয়া ৮৫ শতাংশ পরিবার মনে করে, বিদ্যমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আগামী ৬ মাসে তাদের আরও ধার করতে হবে।
এক সময় মানুষ আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধার করত। কিন্তু এখন এ সুযোগ সংকুচিত হয়ে পড়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৪৫ শতাংশ পরিবার ধারের উৎস হিসাবে বেছে নিয়েছে ক্ষুদ্রঋণের প্রতিষ্ঠান। সানেমের মতে, এ ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের কারণে গরিব মানুষ সুদের দুষ্টচক্রে পড়ে যায়; পরবর্তীকালে সেসব পরিবার আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না।
বস্তুত অব্যাহত মূল্যস্ফীতির কারণে বহুদিন ধরেই গরিব মানুষের দম বন্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। অতীতে আমরা লক্ষ করেছি, ভরা মৌসুমেও চালের বাজার অস্থির ছিল। অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে সব ধরনের নিত্যপণ্যের বাজারই অস্থির করে তোলে। তাদের কারসাজির কারণে গরিব মানুষের কষ্ট আরও বেড়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা রোধে সরকারি সংস্থাগুলোর কার্যক্রম একেবারেই দৃশ্যমান নয়। জানা যায়, অনেক দেশে খাদ্যোৎপাদন কম হচ্ছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও কৃষি উপকরণের সংকট খাদ্য উৎপাদনে প্রভাব ফেলেছে। বৈশ্বিকভাবে খাদ্য সংকট দেখা দেওয়ায় বহু দেশ খাদ্য রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে; অনেক দেশ খাদ্য রপ্তানির পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আমাদের খাদ্যপণ্যে আমদানিনির্ভরতা কাটানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতিজনিত সমস্যার সমাধানে সরকারকে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সরকার অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। খাদ্য সহায়তার আওতায় চাল, চিনি, ভোজ্যতেলের পাশাপাশি অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার দেওয়াও জরুরি। একই সঙ্গে গরিব মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের দেশের কৃষি খাত বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে উৎপাদন বাড়াতে নিতে হবে যথাযথ পদক্ষেপ।