রেলের যাত্রীসেবা প্রশ্নবিদ্ধ
দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশ রেলওয়ের দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনার বিষয়টি বহুল আলোচিত। এসব সমস্যার সমাধানে কর্তৃপক্ষ বারবার আশ্বাস দিলেও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না; বাড়ছে না যাত্রীসেবার মান।
রেলওয়ের উন্নয়নের জন্য একের পর এক প্রকল্প নেওয়া হয়। শুধু চলমান ৩৯টি প্রকল্পেই বরাদ্দের পরিমাণ পৌনে দুই লাখ কোটি টাকা। রেল উন্নয়নের জোয়ারে ভাসলেও যাত্রীসেবার মান না বাড়ার বিষয়টি দুঃখজনক।
রেলে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অনেক ক্ষেত্রে প্রমাণিত হলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার দৃষ্টান্ত নেই। দেশের প্রধান স্টেশন ঢাকার কমলাপুরে প্রবেশ করলেই যাত্রীসেবার নিম্নমানের বিষয়টি বোঝা যায়।
জানা যায়, একটি চক্র সারা বছর কালোবাজারে টিকিট বিক্রি করে নিজেদের পকেট ভারী করছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রায় ৭৫ শতাংশ টিকিট বিক্রি হওয়ার পর চক্রটি বাকি টিকিট নিয়ে কারসাজি শুরু করে। তখন টিকিটপ্রার্থীদের বলা হয়, সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। এরপর ট্রেন ছাড়ার সময় চক্রটি টিটিইদের ফোনে বলে দেয় কোন কোচে কোন কোন সিরিয়াল থেকে কতটি সিট খালি রয়েছে।
জানা যায়, রেলে প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ টিকিটধারী যাত্রীর সঙ্গে দ্বিগুণের বেশি বিনা টিকিটধারী যাত্রী চলাচল করেন। কিন্তু এ অনিয়ম বন্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বিনা টিকিটধারী যাত্রী কর্তৃক টিকিটধারী যাত্রীদের হয়রানির বিষয়টি বারবার আলোচনায় এলেও এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো তৎপরতা লক্ষ করা যায় না। রেলের অসাধু কর্মচারীদের সঙ্গে বিনা টিকিটধারী যাত্রীদের আঁতাত থাকায় টিকিটধারী যাত্রীদের হয়রানি বন্ধ হচ্ছে না। দেশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ এখনো আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধার বাইরে রয়ে গেছে। এছাড়া অনেক মানুষ রয়েছেন, যাদের অনলাইন বা অফলাইনে নিবন্ধনে দক্ষতা অর্জন করতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। ট্রেনে চলাচল করতে গিয়ে এসব মানুষ যাতে বিড়ম্বনার শিকার না হন, এদিকেও কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।
বিপুল বিনিয়োগের পরও রেলওয়েকে কেন লাভজনক সংস্থায় পরিণত করা যাচ্ছে না তা খতিয়ে দেখা দরকার। গত এক যুগে অত্যাধুনিক অনেক ইঞ্জিন-কোচ আনা হলেও তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। পাশের দেশে রেল বেশ লাভজনক গণপরিবহণ। কিন্তু আমাদের দেশে এ সংস্থায় কেবল লোকসান আর লোকসান। এর প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনে পদক্ষেপ নিতে হবে। অনেক দেশেই রেলকে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে; যা আমাদের দেশে কখনোই লক্ষ করা যায়নি। যেসব দেশের রেল স্বাবলম্বী, সেসব দেশে তারা সেবার মান বাড়িয়েই তা করেছে। অন্য দেশের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হলে আমাদের দেশেও রেলকে লাভজনক সংস্থায় পরিণত করা সম্ভব।
সুলভ ও নিরাপদ বাহন হিসাবে মানুষ রেলভ্রমণে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। রেল লাগামহীন চুরি ও দুর্নীতি ছাড়াও নানা ধরনের অব্যবস্থাপনায় নিমজ্জিত হলেও কর্তৃপক্ষের এ নিয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। বস্তুত রেল কর্তৃপক্ষ গণমানুষের চাহিদা পূরণে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। রেল নিয়ে নানা ধরনের পরিকল্পনা ও উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায়নি, বরং প্রতিবছর রেলওয়েকে লোকসান গুনতে হচ্ছে শত শত কোটি টাকা। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটানো অতি জরুরি হয়ে পড়েছে।