ব্যাংকে ঋণশৃঙ্খলা ভঙ্গ
জবাবদিহি প্রয়োজন
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশের ব্যাংক খাতে দীর্ঘদিন ধরে বিরাজ করছে নানা সমস্যা। দুর্নীতি-অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা তো আছেই, সেই সঙ্গে এ খাতের একটি বড় সমস্যা হলো উচ্চ খেলাপি ঋণ। মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলা যায়, খেলাপি ঋণ ব্যাংকগুলোর ভিত্তি দুর্বল করে দিচ্ছে। খেলাপি ঋণ শুধু ব্যাংক খাতে নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেই ঝুঁকি তৈরি করছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন কিছু তথ্য, যা থেকে এ ধরনের একটি ঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। সেটি হলো, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া সীমা লঙ্ঘন করে আগ্রাসী ঋণ দেওয়ায় ১৭টি ব্যাংকে আমানত ও ঋণের ভারসাম্যপূর্ণ শৃঙ্খলা ভেঙে গেছে। ফলে প্রচলিত ধারা ও শরিয়াহভিত্তিক এসব ব্যাংক পড়েছে চরম তারল্য সংকটে। এ পরিস্থিতিতে ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে আমানতকারীদের জন্য। উল্লেখ্য, আমানতের বিপরীতে ব্যাংক কত টাকা ঋণ দিতে পারবে, বাংলাদেশ ব্যাংক এর একটি সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেই সীমা অতিক্রম করা অনুচিত।
বস্তুত, ব্যাংকের ঋণশৃঙ্খলা ভেঙে যাওয়ার নেপথ্যে রয়েছে অনিয়ম, দুর্নীতি এবং বেনামে ঋণ। দেশে খেলাপি ঋণ বিস্তারের অন্যতম কারণ অব্যবস্থাপনা ও ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ বিতরণ। অসৎ কর্মকর্তাদের দাপট ও আধিপত্যের কারণে ব্যাংক খাতে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির পাশাপাশি ঋণখেলাপির ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। মোটা অঙ্কের ঋণ অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার অভিযোগ আছে। আরও অভিযোগ আছে, আমানতের টাকা ব্যাংক পরিচালকরা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেন। আবার সেই ঋণ পরিশোধ না করে খেলাপি হয়ে একপর্যায়ে তা অবলোপনও করেন। অনেকে সেই টাকা বিদেশে পাচার করে সেখানে বাড়ি কিনে রাখেন, যাতে অবস্থা বেগতিক দেখলে সটকে পড়া যায়। এসব ঘটনা ব্যাংক খাতে বিরাজমান বিশৃঙ্খলারই নামান্তর। হাজার হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ, অর্থ আত্মসাৎ, ঋণ অবলোপন ও দুর্নীতি এ বিশৃঙ্খলার কারণ হলেও এসব দেখার যেন কেউ নেই! যেহেতু ব্যাংক খাতের টাকা জনগণের কষ্টার্জিত অর্থের আমানত, তাই এ খাতের দুর্বৃত্তদের কোনো ধরনের ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংকে তারল্য সংকটের দায় ব্যাংকগুলোরই। কারণ তারা নিয়ম লঙ্ঘন করে বিপুল অঙ্কের ঋণ দিয়েছে। ব্যাংকের এ তারল্য ও পুঁজি সংকটের বিরূপ প্রভাব পড়ছে শিল্প খাতেও। বস্তুত ব্যাংক খাতের এ সমস্যা দীর্ঘদিনের। এ সমস্যা নিরসনে ইতঃপূর্বে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, কিন্তু তাতে সংকট কাটেনি। তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সংকট নিরসনের স্থায়ী পদক্ষেপ হিসাবে এ খাতটিকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন।
সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংককে অনিয়ম-দুর্নীতি থেকে দূরে রাখতে আইনের কঠোর প্রয়োগ, জবাবদিহি ও পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। ব্যাংক খাত সংস্কারে একটি কমিশন গঠন করারও দাবি রয়েছে। ব্যাংক কোম্পানি আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে হবে। ব্যাংকগুলোর কর্মকাণ্ড সূক্ষ্মভাবে তদারকি করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন। এ খাতে শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে হতে হবে তৎপর।