বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা
উত্তরণের উপায় খোঁজা জরুরি
![Icon](https://cdn.jugantor.com/uploads/settings/icon_2.jpg)
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
![বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2023/03/16/image-655076-1678917493.jpg)
দেশের পাঁচ উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা বিরাজ করার বিষয়টি উদ্বেগজনক।
জানা যায়, ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর কিছু নেতার নির্যাতনসহ বেপরোয়া আচরণ ও চাঁদাবাজির পাশাপাশি শিক্ষক রাজনীতি, নিয়োগ বাণিজ্য এবং স্থানীয়দের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বৈরী সম্পর্ককে কেন্দ্র করে সংকট তৈরি হয়েছে।
এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ-আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়া ছাড়াও ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। উল্লেখ্য, গত এক মাসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন সাধারণ ছাত্রীকে ছাত্রলীগের কতিপয় নেত্রী কর্তৃক রাতভর নির্যাতন, উপাচার্যের নিয়োগ কেলেঙ্কারি ফাঁস ও বহিরাগত ইস্যু, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের সঙ্গে মতবিরোধে প্রক্টরসহ প্রশাসনের ১৮ কর্মকর্তার পদত্যাগ ছাড়াও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য পরিবহণে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার, সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর, অপহরণ ও চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এ ধরনের পরিস্থিতির নেপথ্য কারণ অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে, এর পেছনে বড় দাগে দুটি বিষয় কাজ করছে। একটি হচ্ছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজনৈতিক ক্যাডার বাহিনীর বেপরোয়া ও অগ্রহণযোগ্য আচরণ; অন্যটি উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের একশ্রেণির শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর নৈতিক স্খলন, দলীয় রাজনীতির চর্চা, উচ্চাভিলাষ প্রভৃতি।
বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন থেকে শুরু করে জাতির যে কোনো সংকট ও ক্রান্তিকালে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনকারী সংগঠন হিসাবে ছাত্রলীগ একসময় অনন্য মর্যাদায় ও জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছিল। অথচ বর্তমানে তথাকথিত কিছু নেতাকর্মীর কার্যকলাপ সংগঠনটির ললাটে এঁকে দিচ্ছে কলঙ্কচিহ্ন। আমরা মনে করি, ছাত্রসংগঠনের বেআইনি কর্মকাণ্ড বন্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর বড় দায়িত্ব রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতে শিক্ষার্থী নির্যাতন-নিপীড়নসহ অনাকাক্সিক্ষত আর কোনো ঘটনা না ঘটে, সেজন্য সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত। অন্যদিকে আজকাল অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নানা কুকর্মের অভিযোগ উঠছে, যা মেনে নেওয়া কষ্টকর। বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসাবে দায়িত্বপ্রাপ্তদের অনেকেই নিয়োগ, টেন্ডার, কেনাকাটা, জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতের অর্থ আত্মসাৎ ও ফল জালিয়াতির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারিতে কেন জড়িয়ে পড়ছেন, এর কারণ অনুসন্ধান করা প্রয়োজন।
একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সুনাম ও মর্যাদা ছিল, যা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছিল। ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতির ডামাডোলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অতীত গৌরব ও ঐতিহ্যের কোনোকিছুই আজ আর অবশিষ্ট নেই। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থেকে শুরু করে অধিকাংশ শিক্ষকের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় দলীয় বিবেচনায়। দলের প্রয়োজনে শিক্ষকরা তাই লাঠিয়াল বাহিনীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেও দ্বিধা করেন না। উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক বর্তমানে শিক্ষকসুলভ নীতি-আদর্শ ও কর্তব্যবোধ জলাঞ্জলি দিতেও বিন্দুমাত্র কুণ্ঠিত হচ্ছেন না; নির্লজ্জভাবে অসৎ উপায় অবলম্বন করে অর্থ ও বিত্তের পানে ছুটে চলেছেন। এ অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে দেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে, যা বলাই বাহুল্য। সবকিছু মিলে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক ভবিষ্যতও যে হুমকির মুখে পড়ছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এ পরিপ্রেক্ষিতে সংকট থেকে দ্রুত উত্তরণের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।