বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার চুরি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জোরালো নজরদারি কাম্য
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশে বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা বেড়েই চলেছে। এর ফলে ঝুঁকিতে পড়েছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) বিদ্যুৎ বিতরণব্যবস্থা। যুগান্তরের অনুসন্ধানে জানা যায়, এসব চুরির সঙ্গে পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ের একটি চক্র জড়িত। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। চুরি হলে মূল্য পরিশোধের পরও ট্রান্সফরমার প্রতিস্থাপনে এক সপ্তাহ থেকে এক মাস পর্যন্ত সময় লেগে যায়।
এ সময়টা বিদ্যুৎবিহীন থাকতে হয় গ্রাহকদের। সেচ মৌসুমে ট্রান্সফরমার চুরি হলে কৃষকদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়। যেসব এলাকার কৃষি পুরোপুরি সেচনির্ভর, সেসব এলাকায় ট্রান্সফরমার চুরি হলে কৃষি উৎপাদন কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তা সহজেই অনুমান করা যায়। দুঃখজনক হলো, এসব চুরি ঠেকাতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তৎপরতা দৃশ্যমান নয়।
প্রশ্ন হলো, ট্রান্সফরমার চুরি রোধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জোরালো পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেন? জানা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চুরি হয়ে যাওয়া ট্রান্সফরমারগুলো রিসাইক্লিং করে নতুন মোড়কে ফের বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। চুরি হওয়া ট্রান্সফরমার ক্রয় করছে কিছু উৎপাদনকারী কোম্পানি ও রিপেয়ারিং ব্যবসার একটি সিন্ডিকেট; সঙ্গে আছে আরইবিসহ কয়েকটি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির কিছু অসাধু কর্মকর্তা।
এছাড়া এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত রয়েছে একটি বিদেশি চক্রও। দেশি-বিদেশি এসব সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটই মূলত ট্রান্সফরমার কারসাজির নেপথ্যে রয়েছে। দেশে অর্ধশত অসাধু ট্রান্সফরমার উৎপাদন ও রিপেয়ারিং কোম্পানি গড়ে উঠেছে। এরাই নামে-বেনামে গ্রাহক ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে অপেক্ষাকৃত কম দামে বিক্রি করছে নিম্নমানের ট্রান্সফরমার। এ কারসাজির অবসান হওয়া জরুরি। প্রতিটি ট্রান্সফরমারের একটি সিরিয়াল নম্বর থাকে। আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী এর টেস্ট সার্টিফিকেট আছে। বিতরণ কোম্পানিগুলোর এসব না দেখে ক্রয় করার কথা নয়। প্রশ্ন হলো, এসব যাদের দেখার কথা, তারা কী করছেন? বস্তুত কিছু ট্রান্সফরমার উৎপাদকের সঙ্গে অসাধু ব্যবসায়ী ট্রান্সফরমার চোরচক্রের যোগসাজশের কারণেই চুরি হয়ে যাওয়া ট্রান্সফরমারগুলো নতুন মোড়কে ফিরে আসে গ্রাহকদের হাতে।
ট্রান্সফরমার চুরির পাশাপাশি গভীর নলকূপের বৈদ্যুতিক মিটার চুরির বিষয়টিও বহুল আলোচিত। গভীর নলকূপের বৈদ্যুতিক মিটার খুলে নিয়ে আটকে রেখে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করা হয়। চোরের দল এতটা বেপরোয়া আচরণের সুযোগ পায় কী করে? এ রহস্য উদ্ঘাটন করা হলে এসব চুরির অনেক তথ্য জানা যাবে। ট্রান্সফরমার চুরি ঠেকাতে প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়টিও বারবার আলোচনায় আসে। তবে যেহেতু এসব চুরির সঙ্গে স্থানীয় একটি চক্র এবং পল্লী বিদ্যুতের একটি চক্রের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে, সেহেতু কেবল প্রযুক্তির ব্যবহারে এ ধরনের চুরি ঠেকানো যাবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। এসব চুরি ঠেকাতে কর্তৃপক্ষকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে জনগণকেও সচেতন করে তুলতে হবে। দেশি-বিদেশি কোনো সিন্ডিকেট কারসাজি করে যাতে পার পেতে না পারে, সেজন্য নিতে হবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। স্থানীয় কোনো চক্র এবং আরইবির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যদি দুর্নীতি করে পার পেয়ে যায়, তাহলে ট্রান্সফরমার চুরি ঠেকাতে যতই পদক্ষেপ নেওয়া হোক না কেন, তাতে উল্লেখযোগ্য কোনো সুফল মিলবে না।