রোহিঙ্গা সংকটে নতুন মাত্রা
প্রত্যাবাসনে গুরুত্ব বাড়ানো জরুরি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য দাতা দেশ ও সংস্থাগুলো মানবিক সহায়তা কমিয়ে দিয়েছে।
রোহিঙ্গা সংকটের শুরুতে যেখানে তাদের জন্য ব্যয়ের ৭২ শতাংশ পাওয়া গেছে দাতাদের কাছ থেকে, সেখানে ২০২২ সালে তা ৬২ শতাংশে নেমে এসেছে। আরও জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা বাবদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এতদিন প্রতি পরিবারের প্রত্যেককে ১২ ডলার করে সহায়তা দিচ্ছিল, যা গত বুধবার থেকে ১০ ডলারে নেমে এসেছে।
একইসঙ্গে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিও (ডব্লিউএফপি) রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কাটছাঁট করেছে। বৈশ্বিক সংকটের বাস্তবতায় আশঙ্কা করা হচ্ছে, চলতি বছর রোহিঙ্গাদের জন্য সাহায্যের পরিমাণ আরও কমতে পারে। এ প্রবণতা অত্যন্ত উদ্বেগজনক, কারণ তা রোহিঙ্গা সংকটে নতুন মাত্রা যুক্ত করবে।
এমনিতেই নানাভাবে রোহিঙ্গা সংকটের বিপুল ভার বহন করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে; তার ওপর সাম্প্রতিক সময়ে আশ্রয় শিবিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ নানা ধরনের সমস্যার উদ্ভব হয়েছে। এখন ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির এ সময়ে সাহায্য কমে যাওয়ায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবিরের বাইরে আসার প্রবণতা আরও বাড়বে, যা বাংলাদেশের জন্য সংকটজনক পরিস্থিতি তৈরি করবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের চেষ্টায় আমাদের আরও বেশি সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি আমরা।
বাংলাদেশ মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও তারা এখানে নিয়মতান্ত্রিকভাবে বসবাস করছে না। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারা খুনোখুনিতে লিপ্ত হচ্ছে। অনেকেই মাদক ব্যবসা, অপহরণ ও ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের পরিবেশ-প্রতিবেশেরও ক্ষতি করছে প্রচুর। বিপর্যয় ঘটাচ্ছে পরিবেশের।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে কক্সবাজারের আট হাজার একরের বনভূমি ধ্বংস হয়েছে। গত পাঁচ বছরে রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহসহ শতাধিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ পরিস্থিতির সঙ্গে নতুন সমস্যা যুক্ত হলে তার সমাধান করা দুরূহ হয়ে পড়বে। প্রশ্ন হলো, রোহিঙ্গা সংকট একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা, বাংলাদেশকে কেন এর দায়ভার বহন করতে হবে?
রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সংকটটি জাতিসংঘেও উত্থাপিত হয়েছে এবং এ বিষয়ে যথেষ্ট আলাপ-আলোচনা হয়েছে। এমনকি আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতেও রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে মামলা হয়েছে। কিন্তু এসব সত্ত্বেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে কোনো অগ্রগতি হয়নি। একটা বিষয় স্পষ্ট হয়েছে, মিয়ানমার বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে আগ্রহী নয়। তাদের গত পাঁচ বছরের ট্র্যাক রেকর্ড তা-ই বলছে।
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর একটাই উপায় রয়েছে আর তা হলো, মিয়ানমারের ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি করা। মনে রাখা দরকার, আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ আমলে নিয়ে অন্তর্বর্তী রায় দিলেও দেশটি তাতে গা করেনি। এ অবস্থায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর চাপের বিকল্প নেই।
রোহিঙ্গাদের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা প্রদান এ সংকটের একটি সাময়িক সমাধান হতে পারে, কিন্তু তা স্থায়ী সমাধান নয়। স্থায়ী সমাধান হলো স্বদেশে তাদের প্রত্যাবাসন। আর তাই রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে পৌনঃপুনিকভাবে আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলে ধরতে হবে। রোহিঙ্গা সংকট আরও দীর্ঘায়িত করার কোনো সুযোগ নেই। যত দ্রুত সম্ভব এ সংকট থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাই।