ধলেশ্বরীর বুকে চাষাবাদ!
খননকাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশে যে লক্ষ্যে নদী খনন করা হচ্ছে তার সুফল না পাওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ শিরোনামে মহাপরিকল্পনার আওতায় মানিকগঞ্জের ধলেশ্বরী নদী খনন হয়েছে দুই বছর আগে।
অথচ এরই মধ্যে নদীপথের বিস্তীর্ণ এলাকা শুকিয়ে গেছে। জেগে ওঠা বালুচরে ইতোমধ্যে চাষাবাদও শুরু হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে নদী শুকিয়ে যাওয়ায় ৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত প্রকল্পের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
২০১৮ সালে নদী ভাঙন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ ছয়টি লক্ষ্য নিয়ে এ মহাপরিকল্পনা একনেকে পাশ হয়।
ওই পরিকল্পনার আওতায় ৬৪ জেলার ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনর্খনন প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়) অংশ হিসাবে মানিকগঞ্জের ধলেশ্বরী নদী পুনর্খননের উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। শুরু থেকেই অভিযোগ ছিল, প্রকল্পটির খননকাজের প্রতিটি গ্রুপের ঠিকাদারের ইচ্ছা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নদী যে পরিমাণ গভীর করার কথা, তা হয়নি; মাটি বাণিজ্য নিয়ে মহাব্যস্ত ছিলেন তারা।
কালিগঙ্গা নদী থেকে ধলেশ্বরী নদীর উৎসমুখ সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লি থেকে সিংগাইর উপজেলার ইসলামপুর পর্যন্ত ৪৫.৫০ কিলোমিটার খনন শুরু হয় ২০১৯ সালের নভেম্বরে। পাঁচটি প্যাকেজে এই খনন কর্মসূচির চুক্তিমূল্য ধরা হয় ৭৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। কাজ শেষ করার সময় ধরা হয় ২০২০ সালের ডিসেম্বর। এক বছর বাড়িয়ে কাজ শেষ হয়েছে ২০২১ সালের শেষদিকে।
পাঁচটি প্যাকেজের প্রথমটি শুরু হয় তিল্লি মুখ থেকে জান্না পর্যন্ত ১০.২০ কিলোমিটার অংশে। নদীর এই অংশে এখন কয়েকটা ডোবার অস্তিত্ব থাকলেও বেশিরভাগ পানিশূন্য। নদী-তীরবর্তী বাসিন্দারা অনেক জায়গায় মাটি খুঁড়ে গর্ত করে সেই পানি সংগ্রহ করে দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। কালিগঙ্গা নদী থেকে ধলেশ্বরী নদীর উৎপত্তি হয়েছে, যাকে তিল্লি মুখ নামে অবহিত করা হয়। সেখানে বিরাট এলাকাজুড়ে চর পড়ে দুই নদীকে বিভক্ত করে ফেলেছে। কালিগঙ্গা নদীতে পানির প্রবাহ থাকলেও ধলেশ্বরীতে নেই। পর্যাপ্ত গভীর না করার কারণে নদীতে চর পড়েছে। যদি কালিগঙ্গার গভীরতায় ধলেশ্বরী গভীর করা হতো, তাহলে এত দ্রুত পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যেত না। অভিযোগ আছে, বিপুল অর্থ খরচ করে নদী খননে মাটি ব্যবসায়ীদের লাভ হলেও আসল কাজ কিছুই হয়নি। শুষ্ক মৌসুমে যদি নদী শুকিয়ে যায়, তাহলে তা খনন করার কোনো অর্থই থাকে না। সারা বছর পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হলে খননকাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।