ইউটার্নগুলো এখন মরণফাঁদ, মহাসড়ক নিরাপদ করার পদক্ষেপ নিন
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন হিসাবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনাও।
জানা যায়, এ মহাসড়কের ৫৪টি ইউটার্ন এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এসব ইউটার্নে প্রতিদিনই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। এতে প্রাণ যাচ্ছে যাত্রী ও পথচারীর; পঙ্গু হচ্ছে বহু মানুষ। হাইওয়ে পুলিশের সমীক্ষায় দুর্ঘটনার জন্য ১০টিরও বেশি কারণ চিহ্নিত হলেও এগুলো প্রতিকারে কর্তৃপক্ষকে জোরালো উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না।
গত বছর এ অঞ্চলে ৩ শতাধিক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩ শতাধিক মানুষ। এ অঞ্চলের অধীনে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার, কুমিল্লা-সিলেট, কুমিল্লা-চাঁদপুর-নোয়াখালী আঞ্চলিক সড়কসহ ৭৫০ কিলোমিটারেরও বেশি সড়ক রয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের তথ্যমতে, এসব সড়কে ৭০ শতাংশ দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ ৫৪টি বিপজ্জনক ইউটার্ন, শতাধিক সিএনজি স্টেশন, মহাসড়কসংলগ্ন বৈধ ইজারা দেওয়া হাটবাজার, পোশাক কারখানা ও শিল্পকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল-ক্লিনিক, বাস স্টেশন ও ফুটওভারব্রিজ। জানা যায়, ব্যস্ততম মহাসড়ক-সড়ক দিয়ে মোটরসাইকেলসহ স্বল্পগতির ছোট যানবাহন চলাচল, পথচারীদের নিয়ম না মানার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। এছাড়া অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল এবং সড়কে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামাও সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধির কারণ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বেশকিছু ইউটার্নে রিপ্লেক্টিভ স্টিকার নেই। এ কারণে রাতে এসব স্থানে দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় ইউটার্নগুলোয় স্থানীয়রা লাল নিশান টাঙিয়ে দিয়েছেন।
কেবল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেই নয়, দেশের সব সড়ক-মহাসড়কে বিশৃঙ্খলা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বস্তুত সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ যানবাহনের অতিরিক্ত গতি এবং চালকের বেপরোয়া মনোভাব। মহাসড়কে অপরিকল্পিত স্পিড ব্রেকারগুলোও দুর্ঘটনার জন্য অনেকাংশে দায়ী। এছাড়া ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, চালকদের পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাব প্রভৃতি কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে। মহাসড়কে যান চলাচলের সর্বোচ্চ গতি বেঁধে দিয়ে এবং গতি পরিমাপক যন্ত্র ব্যবহার করে চালকদের ওই নির্দিষ্ট গতি মেনে চলতে বাধ্য করা হলে দুর্ঘটনা অনেক কমে আসবে বলে মনে করি আমরা। সড়ক দুর্ঘটনার রোধে বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে নানা ধরনের পরামর্শ ও সুপারিশ করা হলেও সেসব আমলে নেওয়া হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলে আশা করা যায়, দেশে সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসবে। যানবাহনের লাইসেন্স প্রদানে যাতে কোনোরকম দুর্নীতি না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। সড়ক-মহাসড়ক ত্রুটিমুক্ত করতেও নিতে হবে পদক্ষেপ। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আইনের প্রয়োগ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ চালক এবং সড়কে চলাচল উপযোগী ভালো মানের যানবাহন অবশ্যই প্রয়োজন। একই সঙ্গে জনগণকেও হতে হবে সচেতন।