Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

ফের গ্যাসের দাম বৃদ্ধি

আমদানিনির্ভরতা কাটানোর পদক্ষেপ নিতে হবে

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ফের গ্যাসের দাম বৃদ্ধি

নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে বাড়ানো হলো গ্যাসের দাম। এবার শিল্প, বিদ্যুৎ ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে।

তবে পরিবহণ খাতে ব্যবহৃত সিএনজি এবং বাসায় ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়নি। এছাড়া দাম অপরিবর্তিত থাকবে সার কারখানা ও চা-শিল্পে। নতুন দাম ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। কয়েকদিনের ব্যবধানে দুটি জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট সেবামূলক পণ্যের দাম বাড়ানোয় স্বভাবতই জনমনে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

উদ্বেগজনক বিষয় হলো, দাম বাড়লেও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, অর্ডারের অভাবে রপ্তানিমুখী শিল্প কঠিন সময় পার করছে। এ মুহূর্তে বিদ্যুতের পর গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি শিল্পকে আরও নাজুক অবস্থায় ফেলবে।

বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী সব রকম জ্বালানির মূল্যে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। জানা যায়, জ্বালানিসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় এবং মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকা দুর্বল হওয়ায় সামগ্রিকভাবে জ্বালানি খাতে ব্যয় ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে একদিকে বাড়বে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ, অন্যদিকে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো হারাবে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা। কাজেই এ সময় গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি বলে মনে করি আমরা।

আন্তর্জাতিক বাজার থেকে চড়া মূল্যে আমদানিকৃত এলএনজি খাতে পর্যাপ্ত ভর্তুকি প্রদান করা উচিত। বর্তমানে স্বল্প-আয়ের মানুষ বহু কষ্টে নিত্যপণ্য ক্রয় করে থাকেন। কাজেই পণ্যের দাম আরও বাড়লে মানুষ অনেক প্রয়োজনীয় পণ্য না কিনেই বাজার থেকে ফিরে আসবে। দফায় দফায় গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে উচ্চ মূল্যস্ফীতির ওপর এর প্রভাব পড়বে। কাজেই গ্যাসের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের বিকাশের স্বার্থে এ খাতে সাশ্রয়ী মূল্যে গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ করা উচিত।

ডলার সংকট এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আবারও আমাদের মনে করিয়ে দিল জ্বালানি খাতে আমদানির ওপর নির্ভর করলে শিল্প-কারখানার বিকাশে এর কতটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কাজেই দেশে শিল্পায়নের বিকাশের স্বার্থে জ্বালানি খাতে আমদানিনির্ভরতা কাটানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সম্প্রতি পেট্রোবাংলার মালিকানাধীন সিলেট গ্যাস ফিল্ডের বিয়ানীবাজারের একটি পরিত্যক্ত কূপে নতুন করে গ্যাস পাওয়া গেছে।

২০১৪ সালে কূপটি বন্ধ হয়ে যায়। কিছু রক্ষণাবেক্ষণের পর ২০১৭ সালে আরও সাত মাস গ্যাস উত্তোলন করা হয়। এরপর কূপটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০২০ সালে এ কূপসহ তিনটি কূপে ওয়ার্ক ওভার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। অবশেষে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে গ্যাস পাওয়া গেছে। এ অভিজ্ঞতার আলোকে অন্যান্য গ্যাসক্ষেত্রেরও পরিত্যক্ত বা পুরোনো কূপগুলোয় গ্যাসের জোর অনুসন্ধান চালানো উচিত বলে মনে করি আমরা।

সবদিক বিবেচনায় নিয়ে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত। আমরা মনে করি, তেল ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। নীতিমালার বিষয়টি নিশ্চিত করা গেলে উদ্যোক্তাদের পক্ষে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা গ্রহণ সহজ হয়। গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম ঘনঘন না বাড়িয়ে সরকারের উচিত চুরি-দুর্নীতি রোধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম