
প্রিন্ট: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:১৩ এএম
দেশ গড়ুন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়

মো. জাহানুর ইসলাম
প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০১৯, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের সংঘবদ্ধ হয়ে ওঠার অনুপ্রেরণা। নব্বইয়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলন, আটানব্বইয়ের প্রলয়ঙ্করী বন্যা, আইলা-সিডরে আমরা এর প্রমাণ পেয়েছি।
বিভিন্ন দুর্যোগের সময় দেখেছি প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অধিকারী ব্যক্তিরা দেশমাতৃকাকে কতটা ভালোবাসেন।
যারা নিজের জন্য নয়, বিনা স্বার্থে দেশের জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি নেয়, নিজের জীবন বিলিয়ে দিতেও কার্পণ্য করে না, প্রকৃতপক্ষে তারাই খাঁটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অধিকারী।
কেউ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অনুসারী কিনা তা বলার কোনো বিষয় নয়, এটা হৃদয়ে লালন করার বিষয়, মনেপ্রাণে ধারণ করার বিষয়। তাই যারা প্রকৃতই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অধিকারী, তারা কখনও মুখে এ কথা বলে না, তারা তাদের কাজের মাধ্যমেই এটা জানান দেয়।
বলতে দ্বিধা নেই, স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিষয়টি অমীমাংসিত থেকে গেছে। রণাঙ্গনের সংগ্রামের মাধ্যমে পাকিস্তানি শাসকদের যাবতীয় অন্যায়-অবিচার-শোষণ থেকে আমরা মুক্ত হয়েছি; কিন্তু কাক্সিক্ষত মুক্তি আজও মেলেনি।
দুর্নীতি আজও আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। আমাদের সমাজ এখনও দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, দলবাজি থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারেনি, যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী।
স্বাধীনতার পর দুর্নীতি দমন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন সময় বহুবিধ আইন, বিধি-বিধান প্রণয়ন করা হয়েছে; কিন্তু দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব হয়নি।
তবে একথা স্বীকার করতেই হবে, দুর্নীতিকে কেবল আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে দমন করা সম্ভব নয়, এর জন্য প্রয়োজন সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ এবং সামাজিক আন্দোলন। এজন্য দরকার সরকারি কর্মকর্তা, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন, সুশীল সমাজ ও নাগরিক গোষ্ঠীর সম্মিলিত প্রয়াস।
চেতনা মূলত একটি অনুভূতি; এর দৃশ্যমান প্রতিফলন ঘটে বাস্তব জগতে কর্মের মাধ্যমে। ব্যক্তির কর্ম বুঝতে পারলে খুব সহজেই চেতনাটাকে বোঝা যায়।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে সেই কর্ম, যার ফলে বাঙালির একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র অর্জিত হয়েছে। বৈষম্যমুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, শোষণমুক্ত, সামাজিক ন্যায়বিচারভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করার নামই হল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।
বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ ও লালন করুক, এটা আমাদের সবারই কামনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সবাইকে অনুপ্রাণিত করে তুলতে হবে এবং তাদের চিন্তা-চেতনায় দেশাত্মবোধ, জাতীয়তাবোধ এবং তাদের চরিত্রে ন্যায়বোধ, কর্তব্যবোধ, মানবিক চেতনা, মুক্তবুদ্ধির চর্চা, শৃঙ্খলা, অধ্যবসায়সহ সুনাগরিকের বিভিন্ন গুণের বিকাশ ঘটাতে হবে।
আমরা বিশ্বাস করি, এ পথে চলতে পারলে আমাদের নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শাণিত হবে। সব ধরনের দুর্নীতি, অনিয়ম থেকে মুক্তি পাবে দেশ। দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে আমাদের সোনার বাংলাদেশ।
তাই আসুন আমরা নিজে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করি এবং এ চেতনা ধারণ করতে অপরকে উৎসাহিত করি। আগামীর সোনার বাংলাদেশ গড়তে অবদান রাখি।
মো. জাহানুর ইসলাম : সভাপতি, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম