সোনাগাজীতে বিএনপি কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা
রাউজানে যুবদলকর্মী ও ফুলতলায় যুবককে গুলি করে হত্যা
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ফেনীর সোনাগাজীতে পূর্ববিরোধের জের ধরে বিএনপিকর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় তার পা ও হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করে সন্ত্রাসীরা। চট্টগ্রামের রাউজানে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঘুম থেকে ডেকে নিয়ে যুবদলকর্মীকে গুলি করে হত্যা করেছে নিজ দলের প্রতিপক্ষ। এছাড়া খুলনার ফুলতলায় যুবককে গুলি করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
ফেনী ও সোনাগাজী : সোনাগাজীর চরছান্দিয়া ইউনিয়নের ওলামা বাজার ইসলামপুর হাজীর ফার্মের সামনে সোনাগাজী-কোম্পানীগঞ্জ সড়কে বিএনপিকর্মী মো. আবুল হাশেমকে কুপিয়ে পা ও হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় পুলিশ মো. রাসেল নামের একজনকে আটক করেছে। নিহত হাশেম চরদরবেশ ইউনিয়নের মো. আব্দুল শুকুরের ছেলে। এলাকাবাসীর ধারণা, ওই এলাকায় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ২০২৩ সালে সংঘর্ষে বেলাল হোসেন নামে একজন নিহত হন। ওই হত্যা মামলায় আবুল হাশেম প্রধান আসামি ছিলেন। সেই ঘটনার জেরে হাশেমকে হত্যা করা হয়। হাশেমের মা পারুল আক্তার বলেন, ৯৬ সালে চলাচলের জায়গা নিয়ে বিরোধ হয়। জায়গার বিরোধ নিয়ে আমার স্বামী আব্দুল শুকুরকে প্রতিপক্ষের লোকজন মেরে পঙ্গু করে দেয়। ৫ বছর ধরে বাড়ি ছাড়া হয়ে তারা সোনাগাজীতে এসে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। আমার ছেলেকে হত্যা করার আগে হাদা বেপারির সুফিয়ান মেম্বারের ঘরে বসে গোপন বৈঠক হয়। এ বৈঠকে জিয়া উদ্দিন, রুবেল, মো. আকন, ননা মিয়া, আক্তারসহ মুখোশদারি কয়েকজন পরিকল্পনা করে। মৃতুর আগে আমার ছেলে তাদের নাম বলে যায়। এর আগেও উপজেলার সওদাগর হাটে রাত ৩টায় একটি দোকানে বৈঠক করে হত্যাকারীরা।
পারুল আরও বলেন, আমার ছেলে ফজরের আজান দিলেই মোটরসাইকেল নিয়ে কাজে বের হয়ে যেত। আমাদের ৫০টিরও বেশি মহিষ ছিল-সেগুলোও তারা বিভিন্ন সময়ে চুরি করে নিয়ে যায়। মহিষের দুধ ও মহিষ বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করে পরিবার চালাত আমার ছেলে।
মা পারুল আরও বলেন, মঙ্গলবার ভোরে মহিষ বিক্রির ২ লাখ টাকা নিয়ে সোনাগাজী থেকে মোটরসাইকেলে ওলামা বাজার পার হয়ে ইসলামপুর হাজীর ফার্মের সামনে পৌঁছালে বোরকা ও মুখোশ পরা সন্ত্রাসীরা রাস্তার দুপাশে রশি টেনে তাকে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে রাস্তার ওপর ফেলে দেয়। এ সময় হাশেমের ওপর হামলা চালায়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করে এবং হাতের কবজি ও পা কেটে বিছিন্ন করে ফেলে। স্থানীয়রা তাকে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা যান। তার মাথা, হাত ও শরীরের বিভিন্ন অংশে চাইনিজ কুড়াল, দা ও রডের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী জসিম উদ্দিন নামে এক টমটমচালক বলেন, তার বাড়ির সামনে ভোরে তিনজন কালো বোরকা ও মুখোশ পরে হাঁটাহাঁটি করছিলেন। তখন আমি টমটম নিয়ে সোনাগাজীর দিকে চলে যাই। যাওয়ার কিছুক্ষণ পর একজন আমাকে মোবাইল ফোনে জানান একজনকে হত্যা করে রাস্তার ওপর ফেলে দিয়েছে। বোরকা ও মুখোশ পরা লোকগুলোই হত্যার সঙ্গে জড়িত হতে পারে।
সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বায়েজিদ আকন বলেন, এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে আটক করা হয়েছে।
রাউজান (চট্টগ্রাম) : রাউজানে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ঘুম থেকে স্থানীয় বাজারে ডেকে নিয়ে মো. ইব্রাহিম নামে এক যুবদলকর্মীকে গুলি করে হত্যা করেছে নিজ দলের প্রতিপক্ষ। মঙ্গলবার দুপুর দেড়টায় উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের গাজীপাড়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ইব্রাহিম ওই এলাকার মো. আলমের ছেলে। সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যা করে চলে যাওয়ার সময় কদলপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তালুকদার বাড়ির আবুল কালামের ঘরে ভাঙচুর চালায়। এ সময় তার ছেলে মন্নানকে না পেয়ে তার ভাই অটোরিকশাচালক মো. নাঈমের পায়ে ও হাঁটুতে গুলি করে। তাকে প্রথমে রাউজান উপজেলা হাসপাতাল, পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অটোরিকশায় এসে সন্ত্রাসীরা মাথায় গুলি করে ইব্রাহিমকে হত্যা করে। এ সময় দিগি¦দিক ছুটে প্রাণে রক্ষা করেন বাজারের মানুষজন।
ইব্রাহিমের বাবা মো. আলম বলেন, আমার ছেলের সঙ্গে কারও কোনো শত্রুতা নেই। সে এলাকায় মাটি ও বালির ব্যবসা করে। তাকে একদল সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে হত্যা করেছে।
ইব্রাহিমের চাচা ও রাউজান ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সদস্য সচিব আবদুল হালিম বলেন, বাজারে আমাকেও গুলি করেছিল। আমি পালিয়ে প্রাণে বেঁচে যাই।
লাশ সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে। ইব্রাহিমের মাথায় গুলি করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে দুটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে।
খুলনা : ফুলতলা উপজেলায় সুমন মোল্লা নামের একজনকে গুলি করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। উপজেলার পিপরাইল এলাকায় মঙ্গলবার দুপুর ১টায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত সুমন পিপরাইল গ্রামের রকিব উদ্দিন মোল্লার ছেলে। পুলিশ জানায়, সুমন জামিরা বাজারে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয় দুপুর পৌনে ২টায়। উপজেলার পিপরাইল এলাকায় পৌঁছালে একটি মোটরসাইকেলে আসা তিন যুবক গতিরোধ করে সুমনকে গুলি করে। এ সময়ে সুমন মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পাশের ধান খেতে পড়ে যান। স্থানীয়রা তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়।
ফুলতলা থানার ওসি (তদন্ত) মনিরুজ্জামান খান বলেন, সুমনকে সন্ত্রাসীরা গুলি করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। হত্যাকারীদের ধরতে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করছে। সুমনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা আছে এবং সেই মামলায় তিনি কারাগারেও ছিলেন।
