
প্রিন্ট: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১৩ পিএম

জবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আরও পড়ুন
পহেলা বৈশাখে বাঙালির শত বছরের ঐতিহ্য ‘হালখাতা উৎসব’। টালি খাতায় হিসাব রাখা হতো বকেয়ার। তবে প্রযুক্তির কল্যাণে টালি খাতার জায়গা নিয়েছে কম্পিউটার বা নোটপ্যাড। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় দিনদিন আগ্রহ বাড়ছে অনলাইন কেনাবেচায়। ফলে কমে গেছে হালখাতার কার্ড ছাপানোর রীতিও। এভাবে হারিয়ে যাচ্ছে শতবর্ষী এই ‘হালখাতা উৎসব’।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে হালখাতা উপলক্ষ্যে রীতিমতো নিমন্ত্রণপত্র ছাপিয়ে উৎসবের আয়োজন করতেন দোকানিরা। করোনা ও তার পরবর্তী কয়েক বছর ধরে হালখাতার ব্যবহার কমতে থাকে। এর মধ্যেই প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে নববর্ষ ও নববর্ষকেন্দ্রিক অনুষ্ঠানগুলোয় হারিয়ে যাচ্ছে উৎসবের আমেজ। এর মধ্যে অন্যতম ‘হালখাতা উৎসব’। ছোট পরিসরে অনেকে হালখাতা আয়োজন করলেও নেই আগের সেই আমেজ।
রোববার পুরান ঢাকার বাংলাবাজার, শাখারীবাজার ও তাঁতীবাজার ঘুরে এ প্রতিবেদকের কথা হয় বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে। ব্যবসায়ীরা জানান, এখন বাকি বেচাকেনা, বন্ধক রাখা-এসব কয়েক বছর ধরেই বিলুপ্তপ্রায়। বকেয়া লেখার লাল কাপড়ের টালি খাতার ব্যবহার নেই বললেই চলে। হিসাব রাখা হয় মোবাইলের নোটপ্যাড কিংবা কম্পিউটারের এক্সেল শিটে। তাই কমে গেছে ঘটা করে পালন করা হালখাতা উৎসবের আয়োজন।
বাংলাবাজারের এমএ মান্নান প্রোডাক্টের স্বত্বাধিকারী শ্যামল চন্দ্র বলেন, আগের মতো আর হালখাতার কার্ড ছাপানো হয় না। তবুও এই বছর হালখাতা উপলক্ষ্যে কার্ড ছাপিয়েছি। কার্ডের জন্য এখনো তেমন কোনো অর্ডার পাইনি। আর একদিন বাকি আছে, দেখি কী রকম বেচা-বিক্রি হয়।
বাংলাবাজারের ভাই ভাই পেপার অ্যান্ড স্টেশনারির দোকানি বলেন, মানুষ এখন সবাই কম্পিউটারেই হিসাব লিখে রাখে। টালি খাতা তেমন ব্যবহার করে না। যারা একটু বড় ব্যবসায়ী, তাদের মধ্যে দু-একজন লেখার জন্য খাতা ব্যবহার করেন। তবে ধীরে ধীরে তাদের পরিমাণও কমে আসছে। শাখারীবাজারের পূজার সামগ্রীর দোকান নাগ ভান্ডারের এক কর্মচারী বলেন, নববর্ষের হালখাতার এখনো কোনো প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি। তবে এর আগে আমরা দেখেছি, ঘটা করে পালন করা হতো।
সেই সঙ্গে থাকত হালখতা উৎসব। এটা এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কিছু ব্যক্তি তাদের ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য এখনো আয়োজন করেন।
তবে তাঁতীবাজারের শরীফ জুয়েলার্সের দোকানি মাধব ধর স্বল্পপরিসরে হালখাতা আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। পহেলা বৈশাখে করবেন নববর্ষ উপলক্ষ্যে হালখাতা। তিনি বলেন, করোনার পরে গত কয়েক বছর রোজা, ঈদ ও নববর্ষ একই সঙ্গে হওয়ায় হালখাতা উৎসবের আমেজ তেমন বোঝা যায়নি। একদিকে ঈদের খরচ, অন্যদিকে রোজা-সবকিছু মিলিয়ে মানুষ টানাটানির জীবন পার করেছে।
উল্লেখ্য, মোগল সম্রাট আকবরের আমল থেকে পহেলা বৈশাখের উদযাপনের প্রথা শুরু হয়। সেই সময় থেকেই দোকানে ব্যবসার হিসাব করার জন্য শুরু হয় হালখাতার ব্যবহার। ‘হাল’ মানে নতুন, ‘হালখাতা’ মানে নতুন খাতা। পুরোনো বছরের সব হিসাব শেষ করে নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই শুরু হয় নতুন খাতায় হিসাবনিকাশ। এই দিনে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে ক্রেতাদের মিষ্টিমুখ করানো হতো।