
প্রিন্ট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১১:২০ পিএম
‘মার্চ ফর গাজা’য় সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ
গাজীপুরে শোরুম হোটেল কারখানায় ভাঙচুর
কালিয়াকৈরে পেপসি কারখানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ * ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ

যুগান্তর প্রতিবেদন, গাজীপুর ও কালিয়াকৈর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
গাজীপুরে বাটার শোরুম, আবাসিক হোটেল, দোকানসহ ১৫-২০টি কারখানায় ভাঙচুর চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিক ও জনতা। শনিবার বিকালে ‘মার্চ ফর গাজা’য় সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল থেকে এ হামলা চালানো হয়। কোনাবাড়ী, কাশিমপুর, কালিয়াকৈর, টঙ্গী, বোর্ডবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন হাজারো পোশাক শ্রমিক। এছাড়া কালিয়াকৈরে পেপসি কারখানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে প্রায় দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
জানা যায়, সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে শান্তিপূর্ণ মিছিল করেন শ্রমিকরা। বিকালে কোনাবাড়ী এলাকায় স্ট্যান্ডার্ড স্টিচেস ওভেন লিমিটেড, কনকর্ড নিটিং অ্যান্ড ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এবং কাশিমপুরে ডিবিএল গ্রুপের মাইমুন ও মতিন গার্মেন্টস খোলা রাখায় বিক্ষোভ মিছিল থেকে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। এ সময় হামলাকারীরা কোনাবাড়ীতে বাটা শোরুম, আজওয়া, পিজ্জা হল, অ্যাপেক্স, স্বপ্ন সুপার শপ, বিউটি সুইটমিটসহ বেশ কয়েকটি দোকানে হামালা ও ভাঙচুর চালায়।
পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কোনাবাড়ীতে আবাসিক হোটেল রেইনবো ও মুনে হামলা-ভাঙচুর চালায়। এ সময় রেইনবো হোটেল থেকে পেছন দরজা দিয়ে কয়েকজন নারী দৌড়ে পালিয়ে যান। তাদের একজনকে বিক্ষুব্ধ জনতা আটক করে মারধর করে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় মুন হোটেল থেকে আসবাবপত্র বের করে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
স্ট্যান্ডার্ড স্টিচেস ওভেন লিমিটেডের প্রশাসন ম্যানেজার ইউসুফ আলী বলেন, বিকালে বহিরাগত শ্রমিকরা এসে আমাদের কারখানায় হামালা চালায়।
কাশিমপুরে ডিবিএল গ্রুপের এইচআর জিএম মো. নাইমুর রহমান বলেন, বিকাল সাড়ে ৩টায় কিছু শ্রমিক ২নং গেটে এসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। পরে তারা বড় একটি মিছিল নিয়ে এসে আমার কারখানার ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে ছুটি ঘোষণা করা হয়।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন কোনাবাড়ী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবু মোহাম্মদ নাসের আল আমিন বলেন, বিকালে কোনাবাড়ী ও কাশিমপুরে ইসরাইলি আগ্রাসানবিরোধী মিছিল থেকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কয়েকটি কারখানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। কোনাবাড়ীতে ইসরাইলি পণ্য বয়কটের দাবি জানিয়ে বেশকিছু দোকান ও শপিংমলে হামলা ও ভাঙচুর করে শ্রমিকরা। এ সময় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে প্রায় দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের এসপি একেএম জহিরুল ইসলাম বলেন, কয়েকটি কারখানায় শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে ইটপাটকেল ছোড়ে।
কালিয়াকৈরে পেপসি কারখানায় ইটপাটকের নিক্ষেপ : শনিবার সন্ধ্যায় মৌচাকে ট্রান্সকম বেভারেজের পেপসি কারখানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভাঙচুরের চেষ্টা করে বিক্ষুব্ধ জনতা। তারা কারখানার সামনে মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ এসে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়।
কালিয়াকৈর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) যোবায়ের বলেন, বিকালে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মৌচাক থেকে সফিপুর বাজার প্রদক্ষিণ করে স্থানীয়রা। সন্ধ্যার দিকে বিক্ষোভকারীরার মৌচাকের পেপসি কারখানার গেটে গিয়ে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। আমরা তাদের সরিয়ে দিয়েছি।
সিদ্ধিরগঞ্জে ২ পোশাক কারখানা ভাঙচুর, আটক ৪৫ : স্টাফ রিপোর্টার নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ ও দক্ষিণ প্রতিনিধি জানান, ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে যোগ না দেওয়ায় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ইপিজেডের ভেতরে দুটি পোশাক কারখানায় ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় অন্তত ৪৫ জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী।
নারায়ণগঞ্জের শিল্প পুলিশের পরিদর্শক সেলিম বাদশা বলেন, শনিবার বিকাল ৫টায় এ ঘটনা ঘটেছে। কয়েকশ’ লোক সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে ইপিজেডের সামনে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে মিছিল করছিলেন। মিছিলটি এক পর্যায়ে ইপিজেডের ভেতরে ঢুকে যায় ও সেখানের কারখানার শ্রমিকদেরও মিছিলে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানান। কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ করে তারা মিছিলে যোগ না দেওয়ায় ভাঙচুর শুরু করেন মিছিলকারী লোকজন। পুলিশ পরিদর্শক সেলিম বাদশা বলেন, ইপিজেডের ভেতরে ইউনেস্কো বিডি লিমিটেড ও অনন্ত হুয়াশিং লিমিটেড নামে দুটি রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানায় তারা ভাঙচুর ও লুটপাট চালান। আশপাশের কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। অন্তত ৩০ মিনিট তারা ভাঙচুর চালায়। পরে শিল্প পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।