
প্রিন্ট: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩৭ পিএম

শিপন হাবীব
প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
বেলুনে গ্যাস ভরতে গিয়ে সিলিন্ডার বিস্ফোরণসহ প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটছে। শনিবার রাতে রাজধানীর শাহবাগ ফুল মার্কেটে বেলুন ফোলানোর সময় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে চারজন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজনের জীবন শঙ্কায় পড়েছে। বেলুন ফোলাতে হাইড্রোজেন অথবা হিলিয়াম গ্যাসের ব্যবহার খুবই বিপজ্জনক। তা সত্ত্বেও মেলা, জনসভা, ধর্মীয় অনুষ্ঠানসহ নানা অনুষ্ঠানে দিনের পর দিন গ্যাস বেলুন ব্যবহার করা হয়। বিপজ্জনক জেনেও ভিড়ের মধ্যে গ্যাস বেলুনের কারবার চলছে।
গ্যাস ভরার সময় দুর্ঘটনা, গ্যাসে ফোলানো বেলুনের বিস্ফোরণ অথবা গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে প্রায়ই প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। এতে মূল্যবান সম্পদও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বেলুনে গ্যাস ভরার সময় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ২০১৯ সালে নারায়ণগঞ্জে ৯ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া একই বছর একই ঘটনায় রাজধানীর মিরপুরে সাতজনের মৃত্যু হয়। জীবন কেড়ে নেওয়া বেলুনকেন্দ্রিক গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি ও ব্যবহার বন্ধের দাবি তুলেছেন বহু মানুষ। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিপজ্জনক গ্যাসভর্তি বেলুন হরহামেশা বিক্রি হচ্ছে। শাহবাগ ফুল মার্কেটে অহরহ বেলুনে গ্যাস ভরা হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, ২০২২ ও ২০২৩ সালে বেলুন ফোলাতে গিয়ে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ১৩ জন নিহত হয়েছে। ২০২৩ সালের ২৪ অক্টোবর দিনাজপুরে দুই কিশোর সীমান্ত পাল ও প্রসেনজিৎ নিহত হয়। একই মাসে মানিকগঞ্জে সিলিন্ডার ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের মৃত্যু হয়।
পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বেলুন ফোলানোর জন্য গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি। তা সত্ত্বেও রাজধানী থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা ও গ্রামের পথে-ঘাটে গ্যাস বেলুন ফোলানো ও বিক্রি করা হচ্ছে। এতে পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তবে পুলিশ বলছে, এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে তারা প্রতিনিয়ত কাজ করছে, প্রচার চালাচ্ছে। পুলিশ আরও জানায়, তবে এরকম বিপজ্জনক গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারসহ বিস্ফোরক বিষয়গুলো দেখার আলাদা দপ্তর রয়েছে। বিস্ফোরক অধিদপ্তর এর দেখভাল করে। পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, পুলিশ সতর্কাবস্থানে থাকলেও তা নিয়ন্ত্রণে আসছে না। যতই পুলিশ কড়া হোন না কেন, সাধারণ মানুষ সচেতন না হলে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধ করা যাবে না। কারণ, গ্যাসের বেলুনে শিশু-কিশোরসহ অনেকেরই প্রবল আকর্ষণ তৈরি হয়।
রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবিদা সুলতানা যুগান্তরকে বলেন, গ্যাস দিয়ে বেলুন ফোলানো মানেই মৃত্যু ডেকে আনা। তিনি বলেন, হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম দুটি গ্যাস বাতাসের চেয়ে হালকা। হাইড্রোজেন গ্যাস ভরতি বেলুন ওড়ে বেশি। হাইড্রোজেন গ্যাসের দাম কম হলেও বিপদ বেশি। দিনের পর দিন দুর্ঘটনা ঘটলেও অবৈধ এ ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে না। বরং আনাচে কানাচে বেলুন ব্যবসা, বেলুন ফোলানোর কারবার চাঙ্গা হচ্ছে। সময় এসেছে, কঠোর আইন ও আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে এটা বন্ধ করার।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল যুগান্তরকে বলেন, বিভিন্ন সময় বেলুনে গ্যাস ভরার সময় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। এসব দুর্ঘটনায় সাধারণ মানুষের মৃত্যুসহ বহু মানুষ গুরুতর আহত হচ্ছেন। দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে আমরা প্রচার চালাচ্ছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রচার চালাচ্ছি। তবে সাধারণ মানুষ তেমন সচেতন হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে। আমরা তো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। আইন বা আইনি বিষয়গুলো তো সরাসরি প্রয়োগ করতে পারি না। এ ক্ষেত্রে পুলিশ, বিস্ফোরকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কাজ করছে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, পুলিশ যথাযথ কাজ করছে। তবে গ্যাস বেলুন বা গ্যাস সিলিন্ডারের বিষয়গুলো দেখার জন্য আলাদা অধিদপ্তর রয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিরোধকারী সংস্থাগুলো উদ্যোগ নিলে পুলিশ সহযোগিতা করবে। তবে, এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি হলো সাধারণ মানুষের সচেতন হওয়া। মানুষ সচেতন হলে এ ব্যবসা এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে।