
প্রিন্ট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৩২ এএম

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আরও পড়ুন
আধিপত্য বিস্তার নিয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিলাশপুরে বালতি ভর্তি মুহুর্মুহু হাতবোমা ফাটানোর খবর এখন দেশজুড়ে আলোচনায়। এখানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেই প্রতিপক্ষ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। প্রতিপক্ষের প্রতি তারা মুহুর্মুহু ককটেল-হাতবোমা নিক্ষেপ করেন। এখানে ২৫ বছরে ককটেল বিস্ফোরণে সাতজন প্রাণ হারিয়েছেন। প্রায় পাঁচ শতাধিক বাসিন্দা আহত হয়েছেন।
শনিবার বিলাশপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, বাড়িঘর ভাঙচুর, মুহুর্মুহু হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি করেছে। সাতজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। রিমান্ডের আবেদন করে শরীয়তপুর আদালতে রোববার দুপুরে তাদের সোপর্দ করেছে পুলিশ। এদিকে, ঘটনার পর এলাকা পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে এবং এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। আধিপত্য বিস্তারের ঘটনা নিয়ে বিলাশপুরে বিরোধ অনেক পুরোনো। বিলাশপুর ইউনিয়নের ২১ গ্রামে ৪০ বছর ধরে প্রতিপক্ষ গ্রুপগুলোর মধ্যে সহিংসতা চলছে। স্থানীয়দের অভিযোগ-২০-২৫ বছর ধরে হাতবোমা ব্যবহার হচ্ছে। নৌপথে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে বিস্ফোরক দ্রব্য এনে এলাকাতেই ককটেল-বোমা তৈরি করা হয়।
জানা গেছে, পদ্মা নদীর তীরঘেঁষা বিলাশপুর ইউনিয়নটি ভাঙনপ্রবণ। জেগে ওঠা চরের জমির দখল, নৌপথ, বালু তোলা ও মাছ শিকার নিয়ন্ত্রণ এবং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সহিংসতা ও বিরোধ চলে আসছে। ১৯৮৪ সালে ইউপি নির্বাচনের পর বিলাশপুরে তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ ওরফে মেছের মাস্টার ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। এর জের ধরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, পালটাপালটি হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। একটি হত্যা মামলায় আবদুল লতিফ দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার পর এবং আনোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর ২০০৯ সালের দিকে দুটি পক্ষের নেতৃত্বই বদলে যায়। বর্তমানে এক পক্ষের নেতৃত্বে আছেন ইউপি চেয়ারম্যান কুদ্দুস বেপারী, আরেক পক্ষের নেতৃত্বে আছেন পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী জলিল মাদবর। দুই পক্ষকেই আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ-সদস্য বিএম মোজাম্মেল হক ও ইকবাল হোসেন সমর্থন দেন। দুই পক্ষেরই সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে। এলাকায় আধিপত্য বজায় রাখতে তারা সংঘর্ষ ও হামলা-পালটা হামলার ঘটনায় জড়ান। ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক তৈরি করা হয়। এরপর প্রতিপক্ষের সমর্থকদের বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়।
গত বছরের ২৭ মার্চ সংঘর্ষে ককটেল হামলায় জলিল মাদবরের সমর্থক বিলাশপুরের মিয়াচাঁন মুন্সিকান্দি গ্রামের সজীব মুন্সি নিহত হন। এর এক মাস পর ২৪ এপ্রিল ককটেল হামলায় মুলাই ব্যাপারীকান্দি গ্রামের কিশোর সৈকত সরদার নিহত হয়। এ ঘটনায় করা মামলায় কুদ্দুস ও জলিলকে আসামি করা হয়। তারা দুজনেই কারাগারে যান। গত মাসে কুদ্দুস বেপারী জামিনে মুক্তি পান। তবে শনিবার রাতে ঢাকায় যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে কুদ্দুস বেপারীকে গ্রেফতার করে। আর জলিল মাদবর কারাগারে আছেন। শনিবার সকালে দুর্বাডাঙ্গা এলাকায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয়পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে পুনরায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় বাড়িঘর ভাঙচুরসহ পাঁচ শতাধিক হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। একপর্যায়ে মুলাই বেপারী কান্দি, সলিমুল্লাহ মাদবর কান্দি ও আহসান উল্লাহ মুন্সি কান্দি রনক্ষেত্রে পরিণত হয়।
এ ঘটনায় রোববার জাজিরা থানার পুলিশের উপ-পরিদর্শক সঞ্চয় কুমার বাদী হয়ে ৮৬ জনকে আসামি এবং আরও অজ্ঞাত ৮০০ থেকে ১ হাজার লোককে আসামি করে মামলা করেছেন। বিলাশপুর থকে সাদ্দাম হোসেন, শাহ আলম, শাহজাহান, মতিউর রহমান, শেখ আ. মালেক, সাহাবুদ্দিন শেখকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদিকে, অভিযানে বোমা তৈরির কিছু সরঞ্জাম উদ্ধার করলেও কোনো বোমা পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি। গ্রেফতারের ভয়ে এলাকা পুরুষশূন্য রয়েছে। জাজিরা থানার ওসি দুলাল আকন্দ বলেন, ঘটনার পর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকা শান্ত না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে।
সাংবাদিকদের তথ্য দেওয়ার অভিযোগে মুলাই বেপারীকান্দি, সলিমুল্লাহ মাদবর কান্দি ও আহসান উল্লাহ মুন্সি কান্দি এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে জলিল মাদবর সমর্থকরা শতাধিক বোমা ফাটিয়ে হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।