
প্রিন্ট: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০:১৬ এএম

অনিকেত মাসুদ, বরিশাল
প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরতি যাত্রায় ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চ-বাসের অধিকাংশ টিকিট সিন্ডিকেটের কবলে চলে গেছে। শনিবার অন্যান্য দিনের তুলনায় যাত্রী ভিড় বেশি ছিল। এ সুযোগে এসব সিন্ডিকেটের সদস্যরা একেকটি টিকিট দুই থেকে তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি করছে যাত্রীদের কাছে। যারা দালালদের কাছ থেকে টিকিট কিনতে পারেনি তারা দুর্ভোগকে সঙ্গী করে বরিশাল ছেড়েছেন। তাই টিকিট কালোবাজারিদের এ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে কঠোর অভিযানের দাবি জানিয়েছেন যাত্রীরা।
সরেজমিন পরিদর্শন ও বিভিন্ন তথ্যমতে, প্রতিবছর দক্ষিণাঞ্চলের সড়কপথের ঈদযাত্রায় এ রুটে ২৫ থেকে ৩০ লাখ যাত্রী আসা-যাওয়া করে। এ যাত্রী পরিবহণে প্রায় ৬০টি কোম্পানির অধীনে অসংখ্য বাস চলাচল করছে। কিন্তু শনিবার যাত্রী চাপ সবচেয়ে বেশি হবে সেই ধারণায় আগেভাগেই বাসের টিকিট নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের কালোবাজারিরা দখলে নিয়েছে। সুপরিচিত কিছু কোম্পানি বাদে অধিকাংশ বাসের ওয়েবসাইটে সিট খালি দেখালেও তা কিনতে পারেনি বলে অভিযোগ করেছে যাত্রীরা। বাস কাউন্টারে গিয়েও মিলছে না টিকিট। কিন্তু বাস টার্মিনালের টিকিট সিন্ডিকেটের সদস্যদের কাছে ৯শ থেকে ১ হাজার টাকায় টিকিট মিলেছে। সজিব ও রাসেলের নেতৃত্বে টিকিট কালোবাজারির সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রায় একই কায়দায় নদীপথে জৌলুস হারানো বিলাসবহুল লঞ্চের অধিকাংশ টিকিট ফের সিন্ডিকেটের কবলে চলে গেছে। শনিবার ডজনখানেক লঞ্চ বরিশাল নদীবন্দর ত্যাগ করলেও অত্যধিক যাত্রী চাপ থাকায় কেবিনের টিকিট ছিল অপ্রতুল। এ সুযোগে দালালরা ১২শ টাকার একটি সিঙ্গেল কেবিন ২ হাজার থেকে তিন হাজার টাকায়ও বিক্রি করেছে। অথচ লঞ্চের কাউন্টারে টিকিট নেই আগে থেকেই। অন্যতম টিকিট কালোবাজারি লেদু, আলাউদ্দিন, ইমাম, বাবুল, সিরাজসহ বেশ কয়েকজনের কাছে দুই থেকে তিনগুণ দামে টিকিট পাওয়া গেছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জোগসাজশে এসব সিন্ডিকেট অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তবে সেনাবাহিনীসহ ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলাকালে দালালদের উৎপাত দেখা যায়নি। অভিযানকালে টিকিট নেই দাবি করা কিছু কাউন্টার থেকে ন্যায্য দামে টিকিট পেয়েছে সাধারণ যাত্রীরা। এছাড়া যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে মহাসড়কের ডজনখানেক পয়েন্টকে যানজট ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করেছে পুলিশ। এসব স্থানে দিনরাত পুলিশি তদারকির মাধ্যমে যানের ধীরগতি রোধ করা হচ্ছে।
লঞ্চযাত্রী আরাফাত রহমান বলেন, কাউন্টারে কেবিনের কোনো টিকিট নেই। তাই বাধ্য হয়ে স্বাভাবিক সময়ের ১ হাজার টাকার সিঙ্গেল কেবিন দালালের কাছ থেকে ৩ হাজার টাকায় কিনতে হয়েছে। বাসযাত্রী শরিফ উদ্দিন বলেন, বরিশাল থেকে ঢাকার টিকিট ৫শ টাকা। কিন্তু ঈদে কোনো কাউন্টারে টিকিট না পেয়ে দালালের কাছ থেকে ১ হাজার টাকায় কিনতে হয়েছে। তাই কঠোর অভিযানের মধ্য দিয়ে এ সিন্ডিকেটের সদস্যদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। আরেক বাসযাত্রী ইমতিয়াজ অমিত বলেন, অনলাইনে বাসের টিকিট অবিক্রীত থাকার পরও জটিলতার কারণে শেষ পর্যন্ত তা কিনতে পারিনি।
সুন্দরবন লঞ্চের ম্যানেজার জাকির হোসেন বলেন, শনিবার চাহিদা বেশি থাকবে জেনে এ দুদিনের টিকিট আগাম কিনে নিয়েছে যাত্রীরা। তাই কাউন্টারে টিকিট নেই।
বরিশালের যাত্রীবাহী লঞ্চ মালিক সমিতির সদস্য সাইফুল ইসলাম পিন্টু জানান, টিকিট কালোবাজারিরা অগ্রিম টিকিট বিক্রির সময় বিভিন্ন কৌশলে তা সংগ্রহ করে থাকে। আমরা কালোবাজারিদের ঠেকাতে সব সময় সচেতন রয়েছি।
বরিশাল বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি মোশাররফ হোসেন বলেন, ১২ মার্চ পর্যন্ত অধিকাংশ বাসের প্রায় সব টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়ে গেছে। বাস কর্তৃপক্ষকে সরকার নির্ধারিত ভাড়া আদায়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়টি নিশ্চিতে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যাত্রীরা টিকিট না পেয়ে বাসে দাঁড়িয়ে, ট্রাকে বা কাভার্ডভ্যানে গন্তব্যে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
বিআইডব্লিউটিএ বরিশাল বন্দর ও পরিবহণ বিভাগের উপপরিচালক সেলিম রেজা বলেন, দালালসহ অপরাধীদের রোধ করে যাত্রীদের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে আমরা বদ্ধপরিকর। এ লক্ষ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারকসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে। বরিশাল নগর পুলিশের কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, দালাল চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। অভিযান চালিয়ে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।