
প্রিন্ট: ০১ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:২১ এএম
সড়ক-নৌ-রেলপথে ঈদযাত্রা
সড়কে চাপ বাড়লেও স্বস্তিতে ফিরছে মানুষ
পদ্মা ও যমুনা সেতুতে গাড়ির চাপ বাড়লেও স্বস্তিতে ফিরছে মানুষ

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সরকারি অফিস-আদালতে ছুটি শুরু হয়েছে। বেশির ভাগ বেসরকারি অফিসেও বৃহস্পতিবার থেকে ছুটি। এ কারণে গতকাল দুপুরের পর থেকেই সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। ফলে যানজট না থাকলেও ধীরগতিতে চলছে গাড়ি। ঘরমুখো মানুষ রেল ও নৌপথে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছে। যদিও অন্যদিনের তুলনায় বৃহস্পতিবার যাত্রীর চাপ ছিল বেশি।
নির্বিঘ্নে পদ্মা সেতু পার হচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমের মানুষ : এবারের ঈদযাত্রায় পদ্মা সেতুতে গাড়ির চাপ থাকলেও নির্বিঘ্নে পার হচ্ছেন দক্ষিণ-পশ্চিমের মানুষ। পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে গিয়ে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই বাড়ছে যানবাহনের চাপ। তবে যানজট বা ভোগান্তি না থাকায় উৎসবের রংয়ে স্বস্তির হাসি মানুষের মুখে। কিন্তু গণপরিবহণ ও যাত্রীবাহী বাসে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। পদ্মা সেতু পার করতেই নেওয়া হচ্ছে ২০০ টাকা।
যাত্রা নির্বিঘ্ন সেতুর মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজা এলাকায় ৭টি বুথে আদায় করা হচ্ছে যানবাহনের টোল। তবে মোটরসাইকেলের জন্য বরাবরের মতোই এবারও রয়েছে আলাদাভাবে টোল নেওয়ার ব্যবস্থা। সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, শুক্রবার থেকে সেতু হয়ে যানবাহনের চাপ বাড়বে। অন্যদিকে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনের অতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
পদ্মা সেতুর সাইড অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাঈদ সাংবাদিকদের জানান, সেতুতে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় টোল আদায় বেড়েছে। বুধবার রাত ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সেতুতে টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ২৩ লাখ ৮৭ হাজার ২০০ টাকা। এ সময় মাওয়া প্রান্ত হয়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়েছে ১৪ হাজার ৯৯২টি যানবাহন। এছাড়া উভয় প্রান্তে চলাচল করেছে ২৬ হাজার যানবাহন।
পদ্মা সেতু (উত্তর) থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাকির হোসেন সাংবাদিকদের জানান, যাত্রী নিরাপত্তার জন্য দিন-রাত পদ্মা সেতু এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি টহল টিম রাখা হয়েছে। তার সঙ্গে ট্রাফিক পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ দিয়ে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে টহল টিম মোতায়েন করা হয়েছে।
যমুনা সেতু হয়েও স্বস্তির ঈদযাত্রা : সড়কপথে গতকাল ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু হয়ে ঘরমুখো মানুষ ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। তবে যানজট না থাকায় স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছে মানুষ। তবে বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীরা কয়েক ঘণ্টা ধরে গণপরিবহণের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। এ সুযোগে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে পরিবহণসংশ্লিষ্টরা। এতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন যাত্রীরা।
যমুনা সেতু টোল প্লাজা সূত্র জানায়, স্বাভাবিক সময়ে ২৪ ঘণ্টায় ১৮ থেকে ২০ হাজার যানবাহন যমুনা সেতু পারাপার হয়। ঈদে গাড়ির চাপ বাড়ে কয়েক গুণ। মঙ্গলবার রাত ১২টা হতে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত ৩৫ ঘণ্টায় ৪৭ হাজার ১৮০টি যানবাহন সেতু পারাপার হয়েছে। টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৯৬ লাখ ৮৩ হাজার ৫৯০ টাকা। এই মহাসড়কের রাবনা, এলেঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঈদযাত্রায় টাঙ্গাইলের মহাসড়কে বাড়ছে পরিবহণের সংখ্যা। উত্তরবঙ্গগামী লেনে বাস, ব্যক্তিগত যানবাহনসহ অন্যান্য পরিবহণের চাপ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। যানবাহনের চাপ বাড়লেও বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের মানুষের ঈদযাত্রায় স্বস্তি ফিরেছে। কোনো ভোগান্তি ছাড়াই পরিবহণগুলো চলাচল করছে। যাত্রীদের অভিযোগ, ঈদে বাড়ি যেতে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। আর চালকরা বলছেন, আগের ভাড়া নিয়ে যাত্রী তুলছেন গাড়িতে।
রাজিয়া বেগম নামের এক নারী বলেন, স্বাভাবিক সময়ে টাঙ্গাইল হতে নাটোরের ভাড়া সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা। সেই ভাড়া এখন ৭০০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। অপর যাত্রী আরিফ হোসেন বলেন, ঈশ্বরদী যাওয়ার জন্য এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করেছি। ভাড়া দাবি করা হচ্ছে দ্বিগুণের বেশি। এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
রাসেল মিয়া নামের এক বাসচালক বলেন, উত্তরবঙ্গ থেকে খালি বাস ঢাকায় নিয়ে যেতে হয়। তাই ন্যায্য ভাড়ার চেয়ে সর্বোচ্চ ১০০ থেকে ১৫০ টাকা ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হয় না।
যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, মহাসড়কে যানজট নিরসনে যমুনা সেতু পূর্ব ও পশ্চিম উভয় অংশে আলাদা দুটি মোটরসাইকেলের লেনসহ ১৮টি টোল বুথসহ মোটরসাইকেলের জন্য চারটি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়লেও নেই যানজট।
কালিহাতী সার্কেলের ইন্সপেক্টর মো.মাহবুবুর রহমান বলেন, কয়েক দিনের তুলনায় বৃহস্পতিবার যানবাহনের চাপ অনেক বেড়েছে। দুপুরের পর চাপ আরও বেড়েছে। তবে কোথাও কোনো যানজট নেই। টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, মহাসড়কে প্রায় সাড়ে ৭০০ পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। এরমধ্যে মোবাইল টিম, মোটরসাইকেল টিম রয়েছে। এছাড়া মহাসড়কে চারটি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। মহাসড়কে বিকল যান অপসারণের জন্য ছয়টি রেকারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
যানজট নেই, তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহনে ধীরগতি : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ধীরে ধীরে বাড়ছে গাড়ির চাপ। কুমিল্লা অংশে ১০৫ কিলোমিটার এলাকার যানজটপ্রবণ এলাকাগুলোতে যানবাহনের ধীরগতি থাকলেও নেই স্থায়ী কোনো জট। ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন রাখতে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি অপরাধ দমনে চেকপোস্ট বসিয়ে সড়কে রয়েছে সেনাবাহিনী। সহযোগিতায় আছেন রোভার স্কাউট ও আনসার সদস্যরাও।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের যানজট প্রবন ১২টি হটস্পট রয়েছে। যেখানে উলটো পথে গাড়ি চলাচল, মহাসড়কে যত্রতত্র দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানামা এবং ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে পথচারীদের সড়ক পারাপারসহ নানা অনিয়মের কারণে সৃষ্টি হয়ে থাকে যানজট। এসব দমনে বাড়তি জনবল মোতায়েন করেছে হাইওয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। ১০৫ কিলোমিটার এলাকায় প্রায় এক হাজারের অধিক পুলিশ সদস্য, দুই শতাধিক রোভার স্কাউট সদস্য এবং সেনাবাহিনী ও আনসার সদস্য নিয়োজিত আছেন। বৃহস্পতিবার মহাসড়কের দাউদকান্দি টোল প্লাজা থেকে চৌদ্দগ্রামের শেষ সীমানা পর্যন্ত খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১২টি হটস্পটের মধ্যে কোথাও কোনো জট নেই। তবে স্থানীয় কিছু মিনিবাস সড়কে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানামা করতে গিয়ে এবং বাজারগুলোতে পণ্য উঠানামায় মাঝে মাঝে অস্থায়ী জট সৃষ্টি হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন পুলিশ ও সেনাবাহিনী।
এশিয়া ট্রান্সপোর্টের যাত্রী মীর মোশাররফ হোসেন ঢাকা থেকে এসে নেমেছেন চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। তিনি বলেন, যানজটের সেই দৃশ্য চোখে পড়েনি। বাস একটু ধীরগতির ছিল। মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ করতে ফেনী যাচ্ছেন অর্পিতা আলম নামে এক শিক্ষার্থী। সড়কের বিভিন্ন মোড় বা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেনাবাহিনী ও পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে। কুমিল্লা ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের ১২ বীর ব্যাটালিয়নের মেজর সানিউল আলম বলেন, সড়কে যানজটের কারণগুলো চিহ্নিত করে হটস্পটগুলোতে চেকপোস্ট বসিয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। সেনাবাহিনীর এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে ঈদে ঘরমুখো মানুষের নির্বিঘ্ন যাত্রায়।
গাজীপুরে যানজটের বাগড়া : ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল এ দুই মহাসড়কের গাজীপুরের বিভিন্ন পয়েন্টে এবারও ঈদযাত্রায় যানজটের শঙ্কা রয়েছে। তবে ঈদকে কেন্দ্র করে তাদের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে।
যাত্রীদের চাপের মধ্যে সময়মতো চলছে ট্রেন : কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে ভিড় বাড়ছে। শতভাগ অনলাইনে কাটা টিকিটে যাত্রীরা ভ্রমণ করছেন। তাছাড়া আন্তঃনগর ট্রেনে শুধু ছাড়ার ২ ঘণ্টা পূর্বে প্রায় প্রতিটা আন্তঃনগর ট্রেনে শোভন সিট ও শোভন চেয়ার কোচের বিপরীতে মোট টিকিটের ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি করছে। তবে বিনা টিকিটের যাত্রীদের কিছুতেই রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। কয়েকটি আন্তঃনগর ট্রেনসহ প্রতিটি মেইল, লোকাল ও কমিউটার ট্রেনে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। প্রতিটি ট্রেনেই যাত্রীদের ভিড়।