
প্রিন্ট: ০১ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:২১ এএম

রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজশাহীর বাগমারার খোর্দ্দকৌর এলাকার নিমাই বিলের ৬০ বিঘা ফসলি জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে। জেলা যুবদলের সদস্য সচিব রেজাউল করিম টুটুল তার কয়েকজন সহযোগী নিয়ে কৃষকের জমিতে জোরপূর্বক পুকুর খনন করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় টুটুলসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আফাজ উদ্দিন প্রামাণিক নামের এক কৃষক আদালতে মামলা করেছেন। এ ছাড়া পুকুর খনন চক্রের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে। রাজশাহীর পরিবেশবাদী একটি সংগঠনের পক্ষ থেকেও স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, নিমাই বিলের ২৫ জন কৃষকের ৬০ বিঘা কৃষি জমিতে পুকুর খননের কাজ প্রায় শেষ। তাদের কেউই জমিতে পুকুর খননের অনুমতি দেননি। তারপরও জোরপূর্বক পুকুর খনন করা হয়েছে। বাধা দেওয়ায় যুবদলের নেতাকর্মীরা হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। এর ফলে ভুক্তভোগী কৃষক এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা চরম আতঙ্কে রয়েছেন। পরিবারগুলোর খাদ্য সংকটের সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে।
এদিকে ১৯ মার্চ আফাজ উদ্দিন প্রামাণিক নামের এক কৃষক জেলার জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে করা মামলায় যুবদল নেতা টুটুলকে প্রধান আসামি করেছেন। মোট ১১ আসামির মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন-বাগমারার তাহেরপুর পৌর যুবদলের আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আরিফ, পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের নেতা শরিফুজ্জামান শরিফ, ভবানীগঞ্জ পৌর যুবদলের সাবেক সভাপতি মো. মানিক, যুবদল নেতা শাহাদাত, ইমন ও সাদ্দাম।
মামলার আরজির বরাত দিয়ে বাদীর আইনজীবী হোসেন আলী পিয়ারা বলেন, আসামিরা ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আফাজ উদ্দিন প্রামাণিকের ৯৩ শতক জমিতে পুকুর খনন শুরু করেন। বাধা দিতে গেলে তারা আফাজের সঙ্গে মারমুখী আচরণ করেন। এ মামলার বাদীসহ ভুক্তভোগী কৃষকরা বাগমারা থানা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) শরণাপন্ন হলেও প্রতিকার পাননি। তাই এ মামলা করা হয়।
ভুক্তভোগী আমজাদ বলেন, ‘আমার জমিতে পুকুর কাটছে, অথচ আমিই জানি না। আমার এটা ধানী জমি। এই জমির ধানই আমরা সারা বছর খাই। ওই জমি হারালে তো আমি বিপদে পড়ে যাব। চালের অভাবে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সমস্যায় পড়ব।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে যুবদল নেতা টুটুল বলেন, জমি দখল করে পুকুর খননের সঙ্গে আমার ন্যূনতম সম্পৃক্ততা নেই। মামলা হওয়ার পরে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জানলাম তারা চারবার সেখানে অভিযান চালিয়েছে। তারা আমার নাম পায়নি। অথচ হঠাৎ করে মামলায় আমাকে আসামি করা হয়েছে। জিডিতেও আমার নাম নেই। যে বা যারা এসবের সঙ্গে সম্পৃক্ত, আমিও চাই তাদের শাস্তি হোক।’ তিনি বলেন, ‘আমি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাইব। এলাকায় আমি জনপ্রিয়। এ কারণে ভয় পেয়ে দলের একটি অংশ আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। পুকুর খননের সঙ্গে যদি যুবদলের অন্য কেউ জড়িত থাকে জেলা কমিটির সদস্য সচিব হিসাবে আমি নিজেই তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।’ এদিকে পুকুর খননের ব্যাপারে ৮ মার্চ ঈশিতা ইয়াসমিন নামের এক নারী থানায় জিডি করেছেন। তার অভিযোগ, তাদের জমিতেও জোরপূর্বক পুকুর খনন করা হচ্ছে। বাধা দিতে গেলে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এখন তিনিও পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। অপরদিকে নিমাই বিলে জোরপূর্বক পুকুর খননের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে জুলাই-৩৬ পরিষদ, সবুজ সংহতি ও বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের পক্ষ থেকে ১৩ মার্চ স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, পুকুর খনন চক্র কৃষকের ধানী জমি নষ্ট করে পুকুর কাটছে। বাধা দিতে গেলে তারা কৃষকদেরই প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। এমনকি কৃষকদের ধানী জমিতে সেচ দেওয়াও বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ করতে গেলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উলটো ফ্যাসিস্টদের সহযোগী তকমা দিয়ে ভুক্তভোগী এক নারীকেই গ্রেফতারের ভয় দেখান এবং মামলা নিতে আপত্তি জানান। অথচ ভুক্তভোগী সেই নারী জুলাই অভ্যুত্থানের একজন সম্মুখযোদ্ধা। থানার ওসি প্রভাবশালীদের পক্ষ নেন এবং তাদের সঙ্গে সমঝোতার জন্য ওই নারীকে চাপ দেন।
এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাগমারা থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগ নেওয়া হয়নি এটা ঠিক নয়। অভিযুক্তরা প্রভাবশালী হলেও তাদের বিরুদ্ধে থানায় জিডি হয়েছে। এটা আদালতে প্রসিকিউশনের জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রসিকিউশনের পর আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
বাগমারার ইউএনও মাহবুবুল ইসলাম বলেন, ‘নিমাই বিলে পুকুর খনন বন্ধ করতে চারবার অভিযান চালিয়েছি। আমি এক্সকেভেটর যন্ত্র অকার্যকর করে এসেছি। আমরা খবর রাখছি। পুকুর খনন হবে না।’