
প্রিন্ট: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪০ এএম
যশোরে ২৩ মামলার আসামি ভাইপো রাকিব কারাগারে

যশোর ব্যুরো
প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

যশোরে হত্যাসহ ২৩ মামলার আসামি ভাইপো রাকিবকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে ডিবির ওসি মঞ্জুরুল হক ভূঞার নেতৃত্বে একটি টিম বেজপাড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। শুক্রবার আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। কাজী রাকিব ওরফে ভাইপো রাকিব শংকরপুর এলাকার তৌহিদুল ইসলামের ছেলে।
ডিবির ওসি জানান, রাকিবের বিরুদ্ধে চারটি হত্যা, সাতটি অস্ত্র, চারটি বিস্ফোরক, চাঁদাবাজিসহ ২৩টি মামলা রয়েছে। কয়েকটিতে তিনি ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি। ২০১৫ সালের একটি মামলায় তাকে আটক দেখানো হয়েছে। জানা যায়, আওয়ামী লীগ শাসনামলে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে কাজ করতেন রাকিব। রাকিবকে এর আগে একাধিকবার পুলিশ আটক করেছে। জামিনে বের হয়ে ফের একই অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছেন তিনি।
রাকিবের উত্থান যেভাবে : ছোটবেলা থেকেই উচ্ছৃঙ্খল ছিলেন রাকিব। রাকিবের যেখানে বাসা সেই এলাকাটি দীর্ঘকাল মাদক বেচাকেনার হটস্পট। এই মাদক বেচাকেনাকে কেন্দ্র করে শহরের শংকরপুর, রায়পাড়া এলাকাটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অপরাধ জগতের তালিকাভুক্ত স্পট। ২০০৯ সালের পর আওয়ামী লীগ যখন প্রথমবার ক্ষমতায় আসে; তখন রাকিব নবম শ্রেণির ছাত্র। ওই সময় স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোস্তফার সঙ্গে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। আওয়ামী লীগ নেতার ছত্রছায়ায় বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত হন। ২০১০ সালের দিকে স্থানীয় আধিপত্যের জেরে এক যুবককে কুপিয়ে জখম করেন। সেই মামলায় হত্যাচেষ্টার আসামি হন রাকিব। এরপর এলাকায় বোমাবাজি, চাঁদাবাজি, দখল, মাদক, ছিনতাইয়ের কাজে তার নাম আসতে শুরু করে।
স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন জায়গায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে ভুক্তভোগীরা এলাকায় রাকিবকে খোঁজ করতেন। তবে শংকরপুর সার গোডাউন এলাকায় রাকিব নামে একাধিক ব্যক্তি থাকায় ভুক্তভোগীরা বিড়ম্বনায় পড়তেন। পরে স্থানীয়রা রাকিবের নামের শেষে ভাইপো বিশেষণ যোগ করেন। এরপর অপরাধ কর্মকাণ্ডের বিস্তারের সঙ্গে তার নামও ছড়িয়ে পড়ে।
অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠার নেপথ্যে : রাকিব প্রথম থেকেই জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের সঙ্গে রাজনীতি করতেন। সন্ত্রাসী হিসাবে পরিচিত থাকায় সরাসরি শাহীনের সঙ্গে ঘেঁষতে পারতেন না রাকিব। তাই প্রথমে শাহীনের অনুসারী আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মোস্তফা এবং পরে শাহীনের আরেক অনুসারী যশোর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা আলমগীর কবির সুমন ওরফে হাজী সুমনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এরপর হয়ে উঠেন শহরের এক অংশের অপরাধ জগতের একক নিয়ন্ত্রক। হত্যাসহ বিভিন্ন মামলায় রাকিব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হলেও মুক্তি পেতে বেগ পেতে হয় তার। শাহীন অনুসারীদের কাছে সহযোগিতা না পাওয়ায় পরে স্থানীয় সংসদ-সদস্য কাজী নাবিলের ঘনিষ্ঠরা তাকে মুক্ত করেন। ২০২১ সালের পর রাকিব কারাগার থেকে বের হয়ে নাবিল অনুসারীদের সঙ্গে রাজনীতি করতে থাকেন। এরপর রাকিব নাবিলের অনুসারী শীর্ষ সন্ত্রাসী ও শহর যুবলীগের বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক মেহবুব রহমান ওরফে ম্যানসেলের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। তার ইশারায় রাকিব রেলগেট, শংকরপুর এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতেন। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে সহযোগী নয়ন, সাব্বির, আরিফদের নিয়ে নিজেই এলাকায় গ্যাং গড়ে তোলেন। পুলিশ বলছে, সাবেক পিপি এজেএডএম ফিরোজের ছেলে আবু শাহরিয়ার অর্ণব, খুলনার ট্রাকচালক, হেলপার, শংকরপুরের রিপন, জুম্মানসহ ৪টি হত্যা, ৭টি অস্ত্রসহ ২৩টি আসামি রাকিব।