
প্রিন্ট: ২৮ মার্চ ২০২৫, ০৩:০৪ পিএম

ইকবাল হাসান ফরিদ
প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ডিবি হেফাজতেই ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের সেকেন্ড ইন কমান্ড এজাজ বিন আলম ওরফে ফাহিমের (৩৪) মৃত্যু হয়েছে। ডিবির হাতে আটকের পর মোহাম্মদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজু হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতারের জন্য আদালতে আবেদনও করে থানা পুলিশ। এজাজের মৃত্যুর দায় এড়াতে ডিএমপির পক্ষ থেকে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে। তবে যুগান্তরের অনুসন্ধানে ডিবি হেফাজতে এজাজের হাসপাতালে মৃত্যুর চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
জানা গেছে, হেজাজ ওরফে এজাজ বিন আলম ওরফে ফাহিমকে গত ১০ মার্চ রাতে রাজধানীর জিগাতলার টালি অফিস রোড থেকে আটক করে যৌথ বাহিনী। পরদিন তাকে মোহাম্মদপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়। এরপর মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ ডাকাতির প্রস্তুতির একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। এজাজ আদালত থেকে জামিনে ছাড়া পান। এরপর তিনি ছদ্মনামে ধানমন্ডির জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৬০১ নম্বর ওয়ার্ডে গত ১৫ মার্চ সকালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার কিডনি ডায়ালাসিস চলা অবস্থায় বিকালে তিনি মারা যান। এরপর পুলিশ প্রহারায় থাকা অবস্থায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের লোকজন এবং এজাজের স্বজনরা হাসপাতাল থেকে জোরপূর্বক এজাজের লাশ নিয়ে যায়। পরে পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখানে রোববার ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়।
ডিবি যেভাবে আটক করে : এজাজ কিডনির রোগে ভুগছিলেন। জামিনে এসে তিনি ফাহিম ছদ্মনামে ধানমন্ডির জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে ভর্তি হন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডিবি ওয়ারী বিভাগের একটি দল হাসপাতালে এজাজের সন্ধানে যায়। সেখানে তার হদিস মিলেনি। পরে হাসপাতালের সংশ্লিষ্টদের এজাজের ছবি দেখান ডিবি কর্মকর্তারা। ছবি দেখে এজাজ হাসপাতালে ভর্তি আছে বলে জানানো হয়। এরপর ডিবি তাকে হেফাজতে নেয়। জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢামেক হাসপাতালে প্রেরণের পরামর্শ দেন। এরপর তাকে ঢামেকে আনা হয়। ঢামেক হাসপাতালে এজাজের পাশে ছিলেন মোহাম্মদপুর থানার এসআই শেখ আব্দুল কাদের ও ডিবির এসআই মাহফুজ। তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ ব্যাপারে মোহাম্মদপুর থানার ওসি আলী ইফতেখার যুগান্তরকে বলেন, জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল থেকে ডিবি ওয়ারী বিভাগের একটি টিম এজাজকে আটক করে। এরপর সেখান থেকে তাকে ঢামেক হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। ডিবি এজাজের আত্মীয়স্বজনসহ তাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যায়। তিনি বলেন, এজাজের বিরুদ্ধে অনেক মামলা রয়েছে। আপাতত চারটি মামলা আমরা পেয়েছি। ধানমন্ডিতে অস্ত্র মামলা, হাজারীবাগে একটি মামলা, মোহাম্মদপুর থানায় ছাত্র হত্যার একটি মামলা এবং একটি দস্যুতার মামলা রয়েছে।
মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক অপারেশন হাফিজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, একজন ছাত্র (রাজু) হত্যা মামলার ৩১ নম্বর আসামি এজাজ। তাকে ওই মামলায় গ্রেফতারের জন্য আমরা ১৫ তারিখই আদালতের অনুমোদন চেয়েছি। আদালত আবেদন মঞ্জুর করেছেন। সুস্থ হলে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।
এজাজের বাবা শাহ আলম খান দাবি করেন, তার ছেলেকে যৌথ বাহিনী ধরে মারধর করে। পরে আদালত থেকে জামিন নিয়ে সে হাসপাতালে ভর্তি হয়। তখন খবর পেয়ে তাকে ডিবি ওয়ারী বিভাগের একটি টিম সেখান থেকে আটক করে। কিডনির সমস্যা নিয়ে ভর্তি হওয়া এজাজকে এই হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তার দাবি, এজাজ এমনিতেই অসুস্থ ছিল। এর মধ্যে তাকে মারধর করায় তার জীবনহানি ঘটেছে। তিনি বলেন, সুরতহাল প্রতিবেদনেও আমার ছেলের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল।
হেফাজতে ছিল না, দাবি ডিএমপির : এদিকে পুলিশ হেফাজতে এজাজের মৃত্যু হয়নি দাবি করে গত ১৬ মার্চ ডিএমপি/এএমএন্ডপিআর/১৫৪নং স্মারকে একটি প্রতিবাদলিপি পাঠায় পুলিশ। ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই প্রতিবাদলিপিতে উল্লেখ করা হয় ‘পুলিশ হেফাজতে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এজাজের মারা যাওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। সঠিক তথ্য হলো, ১৫ মার্চ এজাজ মোহাম্মদপুর থানার নিয়মিত মামলার আসামি হওয়ায় পুলিশ তাকে পর্যবেক্ষণে রাখে। জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। পুলিশ হেফাজতে এজাজের মৃত্যু একেবারেই ভিত্তিহীন দাবি করা হয় ওই প্রতিবাদলিপিতে। এতে বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে তাকে থানা কিংবা পুলিশের অন্য কোনো স্থাপনায় আনা হয়নি। সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়। এতে অনুরোধ করা হয়, সংবাদ প্রকাশে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার।
এ প্রেক্ষিতে আরও দায়িত্বশীলতার সঙ্গেই যুগান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে অনুসন্ধান চালানো হয়। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে এজাজকে হেফাজতে নেওয়ার তথ্য। তবে এ ব্যাপারে ডিবির লালবাগ ও ওয়ারী জোনের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল আউয়ালের সঙ্গে যোগাযোগ করতে একাধিকবার ফোন ও এসএমএস করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি। তবে ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, এ ব্যাপারে লিখিত বক্তব্যের বাইরে তার কোনো বক্তব্য নেই।