Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

উত্তরাঞ্চলে আলুর দামে ধস উঠছে না উৎপাদন খরচ

বিপুল ক্ষতির মুখে হাজারও কৃষক * জমিতে আলুর কেজি ১০ টাকা * হিমাগার মালিক ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজি

Icon

আনু মোস্তফা, রাজশাহী

প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

উত্তরাঞ্চলজুড়ে শুরু হয়েছে আলু তোলার ধুম। শুরুতেই আলুর দামে ধস নেমেছে। এবার আলুর দাম একেবারেই কম। জমিতে বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১২ কেজি দরে। কৃষকরা বলছেন, গত এক দশকে আলু দাম এতোটা কম হয়নি। ফলে উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ আলু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে উত্তরের আলু চাষিরা। ক্রেতা না থাকায় কৃষকরা না পারছে জমি থেকে বিক্রি করতে আবার বুকিং না থাকায় হিমাগারেও রাখতে পারছে না। কৃষকদের আরও অভিযোগ আলুর অস্বাভাবিক দরপতনের পেছনে আলু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হাত রয়েছে। হিমাগার মালিকদের সঙ্গে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের যোগসাজশ রয়েছে।

ভুক্তভোগী কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলে প্রতি কেজি আলু সংরক্ষণে হিমাগার ভাড়া ছিল ৪ টাকা। এবার এক লাফে সংরক্ষণ ভাড়া বাড়িয়ে আট টাকা করা হয়েছে। হিমাগার মালিক ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কৌশল করে হিমাগারের অগ্রিম বুকিং সম্পন্ন করে রেখেছে। এ বছর অধিকাংশ সাধারণ কৃষক আলু রাখার জন্য হিমাগারে কোনো বুকিং সংগ্রহ করতে পারেনি। এখন জমি থেকে আলু তুলে সাধারণ কৃষক না পারছে হিমাগারে দিতে না পারছে বাড়িতে রাখতে। ফলে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট পানির দরে আলু কিনে নিচ্ছে জমিতে। অসহায় কৃষকরা বাধ্য হয়ে কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকায় আলু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। ভুক্তভোগী আলু চাষিরা আরও বলছেন এবার সাধারণ কৃষকরা হিমাগার মালিক ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। ফলে রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের হাজারও আলু চাষি বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আলু বিক্রি করে উৎপাদন খরচের অর্ধেকও না উঠায় ব্যাংক ও মহাজনী ঋণ পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

রাজশাহীর তানোরের আলু চাষি শরিফুল ইসলাম বলেন, এবার আবাদ মৌসুমে বীজ আলুর দাম দ্বিগুণ হওয়ায় এক বিঘা জমিতে আলু আবাদে ব্যয় হয়েছে নিম্নে ৬০ হাজার থেকে ঊর্ধ্বে ৭০ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে এবার আমার আলু হয়েছে ৪ হাজার ৪৫০ কেজি। প্রতি কেজি ১০ টাকা দরে বিক্রি করে পেয়েছি ৪৫ হাজার ৫০০ টাকা। প্রতি বিঘায় এবার আমার ক্ষতি দাঁড়াচ্ছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। ঋণ পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি।

মাইনুল ইসলাম নামের মোহনপুরের আলু চাষি অভিযোগে বলেন, হিমাগার মালিকদের সঙ্গে যোগসাজশ করে আলু মজুতদার সিন্ডিকেট হিমাগারের অগ্রিম বুকিং আগেই নিয়ে রেখেছে। ফলে রাজশাহীর সাধারণ আলু চাষিরা এবার হিমাগারে কোনো বুকিং পায়নি। আমরা গত কয়েক মাস ধরে বুকিং পেতে রাজশাহী জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের কাছে অভিযোগ দিয়েছি, মানববন্ধন করেছি, কিন্তু প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

রাজশাহী হিমাগার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান বলেন, হিমাগারের ভাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে বাড়ানো হয়েছে। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, হিমাগারে বুকিং শুরু হয় আবাদ শুরুর অনেক আগে। অনেক ক্ষেত্রে এক বছর আগেই বুকিং হয়ে যায়। এখানে সিন্ডিকেটের কিছু নেই।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ ড. মোতালেব হোসেন জানান, আবহাওয়া ভালো থাকায় আলুর ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু বিপুল পরিমাণ আলু সংরক্ষণের সুবিধা না থাকায় এবার আলু দাম কমে গেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় ৩ লাখ ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ২৭ টন হিসাবে এই পরিমাণ জমি থেকে এবার প্রায় মোট ৯৮ লাখ ৬৫ হাজার টন আলু ফলনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। উত্তরাঞ্চলের সর্বাধিক আলু উৎপাদনকারী জেলাগুলো হলো রাজশাহী, বগুড়া ও রংপুর। সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, উত্তরাঞ্চলে আলু সংরক্ষণের জন্য ২২১টি হিমাগার রয়েছে। এসব হিমাগারে আলুর ধারণক্ষমতা ২৩ লাখ ৭৫ হাজার টন। এই পরিমাণ উত্তরাঞ্চলে উৎপাদিত মোট আলুর মাত্র ২৩ ভাগ। বাকি ৭৫ লাখ ২৩ হাজার ২৮৮ টন আলু সাময়িকভাবে গৃহ পর্যায়ে সংরক্ষণ করা হয় এবং কিছু আলু চলতি বাজারে বিক্রি করা হয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম