
প্রিন্ট: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৪২ এএম
জবি শিক্ষার্থী অবন্তিকার আত্মহত্যার ১ বছর
প্রকাশ হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন
অগ্রগতি নেই পুলিশের তদন্তের * ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিযুক্ত শিক্ষক দ্বীন ইসলাম

সাকেরুল ইসলাম, জবি
প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুঝ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার এক বছর আজ। গত বছরের ১৫ মার্চ ফেসবুকে সুইসাইড নোট লিখে আত্মহত্যা করেন তিনি।
আত্মহত্যার দিন তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ৭ দিনের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। পরে তিন মাসের মাথায় প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। কিন্তু সেই প্রতিবেদন এখনও প্রকাশ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয় জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার খারাপ আচরণ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন অবন্তিকার মা তাহমিনা বেগম।
আত্মহত্যার পূর্বে জবির আইন বিভাগের এই শিক্ষার্থী ফেসবুকে লেখেন, ‘আমি যদি কখনো সুইসাইড করে মারা যাই, তবে আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী, আর তার সহকারী হিসাবে তাকে সাপোর্টকারী জগন্নাথের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম।’
জানা যায়, অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয় তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি জাকির হোসেনকে। এই কমিটি গত বছরের ১৩ জুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। সর্বশেষ সিন্ডিকেট সভায় সেই প্রতিবেদন উঠলেও কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি প্রশাসন। এমনকি প্রকাশও করা হয়নি এই প্রতিবেদন।
এক বছরেও হয়নি চার্জশিট : এই ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনার দায়ে কুমিল্লার কোতোয়ালি থানায় অবন্তিকার মা বাদী হয়ে মামলা করেন। সেই মামলায় তাৎক্ষণিকভাবে অভিযুক্ত শিক্ষক দ্বীন ইসলাম ও ছাত্র আম্মান সিদ্দিকী গ্রেফতার হন। কিন্তু ১ বছর পার হলেও এখনও গঠন হয়নি চার্জশিট। পুলিশের গঠিত তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। পুলিশের তদন্তের দায়িত্বে থাকা কুমিল্লার কোতোয়ালি থানার এসআই মিজানুর রহমান বলেন, আমি দায়িত্বে আসছি মাত্র দেড় মাস হলো। তদন্তের কিছু কাজ এখনো বাকি আছে। চেষ্টা করছি দ্রুত তদন্ত কাজ শেষ করার।
এদিকে, এই ঘটনায় চার্জশিট গঠনে দীর্ঘসূত্রিতার ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে অভিযুক্ত শিক্ষক ও ছাত্রের জীবন। অভিযুক্ত শিক্ষক দ্বীন ইসলাম ৪ মাস ও শিক্ষার্থী আম্মান সিদ্দিকী ৮ মাস কারাভোগের পর বর্তমানে জামিনে আছেন। তবে কেউ ক্লাসে ফিরতে পারেননি।
অভিযুক্ত শিক্ষক দ্বীন ইসলাম বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন আমি জানতে চেয়েছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দেয়নি। আমি যদি দোষী হয়ে থাকি, তাহলে আমাকে শাস্তি দিক। কিন্তু আজকে এতদিন ধরে আমি পরিবার নিয়ে কীভাবে চলছি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমার খোঁজ নিচ্ছে না। ৭ মাস ধরে আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ হয়ে আছে। কোনো টাকা তুলতে পারছি না। অপর অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আম্মান সিদ্দিকীর বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলেও পাওয়া যায়নি।
অবন্তিকার মা তাহমিনা বেগম বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে আমি প্রথমে ট্রেজারার স্যারকে ফোন দিয়েছিলাম। তিনি রেজিস্ট্রারের কাছে যেতে বলেন। আমি রেজিস্ট্রার অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন স্যারকে দিলে ওনি আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন। বলেছেন আমাকে তদন্ত প্রতিবেদন দেখানো যাবে না। এটা দেখতে হলে আদালতে যেতে হবে।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন বলেন, রিপোর্ট আমরা গত বছর ১৩ জুন প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছি। এর পর সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, প্রতিবেদন ইতোমধ্যে সিন্ডিকেটে উত্থাপন করা হয়েছে। আরও কিছু প্রক্রিয়া বাকি আছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, আরও কিছু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পর্যায়ে রয়েছে। খুব দ্রুত তা দৃশ্যমান হবে।