Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

যশোরে বিএনপি নেতাকর্মীর দখল-চাঁদাবাজি, সহিংসতা

সাত মাসে ২ শতাধিক অভিযোগ, বহিষ্কার শতাধিক

Icon

ইন্দ্রজিৎ রায়, যশোর

প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

যশোরে বিএনপি নেতাকর্মীদের দখল, চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সহিংসতায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। একের পর এক অভিযোগ উঠছে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। তাদের শোকজ, পদ স্থগিত কিংবা বহিষ্কার করেও লাগাম টানা যাচ্ছে না। গত সাত মাসে প্রায় ২ শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গে অভিযোগ পেয়েছে জেলা বিএনপি। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তারপরও একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে নেতাকর্মীরা। এমন পরিস্থিতিতে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সতর্ক করে একগুচ্ছ নির্দেশনা জারি করেছে জেলা বিএনপি।

শনিবার যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, বিএনপির কোনো গ্রুপের নেতাকর্মী কোনো ধরনের সালিশ বা বিচার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। ব্যক্তিগত পাওনা টাকা আদায় বা জমিসংক্রান্ত বিষয়ে সালিশ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। লেক, বাঁওড়, জলাশয়, পুকুর, ঘের দখল বা নিয়ন্ত্রণ থেকে বিরত থাকার জন্য নেতাকর্মীদের সতর্ক করা হয়েছে। দলের কোনো নেতাকর্মী টিসিবি, ভিজিএফ, ওএমএস কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থাকতে পারবে না। একই সঙ্গে সুশৃঙ্খলভাবে ইফতার মাহফিল আয়োজনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, ৫ আগস্টের পর বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দখল, চাঁদাবাজি, লুটপাট ও সরকারি বরাদ্দের ভাগাভাগি নিয়ে সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে। দোকানপাট, নওয়াপাড়া নৌ বন্দরঘাট, বাঁওড়, মৎস্য ঘের, জায়গাজমি, মার্কেট সর্বত্র দখলের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক নেতাকর্মীর নামে অভিযোগ জমা পড়েছে জেলা বিএনপির কাছে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা, নগর ও উপজেলার শতাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পদ স্থগিত করা হয়েছে অন্তত ৩০ জনের। নেতাকর্মীদের তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে গঠন করা হয়েছে মনিটরিং সেল। সর্বশেষ ৫ মার্চ মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের এক কর্মচারীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মোতাহারুল ইসলাম রিয়াদের বিরুদ্ধে। ঘটনার একদিন পর প্রতিবাদে ইউএনওর নেতৃত্বে উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মানববন্ধন করে। পরে মোতাহারুলকে বহিষ্কার করেছে যুবদল। একইদিন সকালে সীমান্তবর্তী উপজেলা শার্শায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতার ১৫৫ বস্তা চাল লুটের অভিযোগ ওঠে উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি রুহুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধে। প্রশাসনের অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা বিএনপি রুহুলের সব পদ স্থগিত করেছে। যদিও ঘটনার একদিন পর সংবাদ সম্মেলন করে চাল লুটের অভিযোগ মিথ্যা দাবি করেছেন রুহুল কুদ্দুস।

অপরদিকে ৫ আগস্টের পর যশোরের নওয়পাড়া নৌবন্দরে অন্তত ২০-২৫টি ঘাট দখলে নিয়েছে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। নওয়াপাড়া ৬ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত দুই দশকের বেশি সময় ধরে আবাহনী ক্রীড়া চক্র দখল করে স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির কার্যালয় ও কোকো ক্রীড়া চক্র অফিস করেছেন নওয়াপাড়া বিএনপির নেতাকর্মীরা। ঘাট দখলসহ নানা অভিযোগে নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান জনির পদ ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্থগিত করেছে বিএনপি। ঝিকরগাছার গদখালী পাইকারি ফুলের মোকামের শতাধিক ব্যবসায়ীর ফুলের ব্যবসা দখলের অভিযোগ উঠেছে বিএনপি ও যুবদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। ফুল ব্যবসায়ী না হয়েও গদখালী ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির কার্যালয় দখলে নিয়েছেন নেতারা। কেউ প্রতিবাদ করলে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে মারধর করা হচ্ছে। দেশের অন্যতম বৃহৎ সীমান্ত শার্শা-বেনাপোল নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। অভিযোগ রয়েছে, ৫ আগস্ট রাজনীতির পটপরিবর্তনের পর মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভারতে পার করে দেওয়ার। একই সঙ্গে অবৈধ ঘাট দিয়ে চোরাই কারবারিও নিয়ন্ত্রণ করছেন বিএনপির কতিপয় নেতাকর্মী। এ বিষয়টি সম্প্রতি জেলা যুবদলের বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক এসকেন্দার আলী জনি ফেসবুকে লাইভে এসে অভিযোগ করেন। চৌগাছার বেড়গোবিন্দপুর বাঁওড় দখলকে কেন্দ্র বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অন্ত ৭ জন আহত হন। এ ঘটনার জের ধরে ২৮ জানুয়ারি চৌগাছা সদর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবদুর রহিমকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ বিষয়ে যশোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের প্রমাণ পাওয়ায় ইতোমধ্যে অনেক নেতাকর্মীর পদ স্থগিত ও বহিষ্কার করা হয়েছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় বিএনপির বর্ধিত সভায় কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে। সেই নির্দেশনার আলোকে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়েছে। শৃঙ্খলাভঙ্গ করলে কোনো ছাড় নেই।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম