Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

হিমাগার ভাড়া দ্বিগুণ

উত্তরাঞ্চলে আলু সংরক্ষণে কাটেনি অনিশ্চয়তা

Icon

আনু মোস্তফা, রাজশাহী

প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলে উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ আলু সংরক্ষণ নিয়ে কাটেনি অনিশ্চয়তা। হিমাগার ভাড়া দ্বিগুণ করার পর আলু সংরক্ষণ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এ অঞ্চলের আলুচাষিরা। ভাড়া কমানোর দাবিতে গত তিন মাসের বেশি সময় ধরে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় আলুচাষিরা আন্দোলন করছেন। কিন্তু হিমাগার ভাড়া কমানোর ঘোষণা দেওয়া হয়নি মালিকদের পক্ষ থেকে। এরই মধ্যে আলুচাষিরা উত্তরের বিভিন্ন জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। দিয়েছেন স্মারকলিপি। স্থানীয় প্রশাসন থেকে দায়সারা ঘোষণা দেওয়া হলেও প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মানতে অস্বীকার করেছে হিমাগার মালিকরা। চাষিরাও সরকারের এই সিদ্ধান্তকে অগ্রহণযোগ্য ও তা হিমাগার মালিকদের স্বার্থ রক্ষার কৌশল বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

আলুচাষিদের আরও অভিযোগ স্বার্থ উপেক্ষা করে এই বিষয়ে প্রশাসন অনেকটা নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। আলুচাষিরা অভিযোগে আরও বলেছেন, বিভিন্ন অজুহাতে উত্তরাঞ্চলের হিমাগার মালিকরা ৪ টাকা কেজির স্থলে সংরক্ষণ ভাড়া অতিরিক্ত ৪ টাকা বাড়িয়ে মোট আট টাকা করেছেন। কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই হিমাগার মালিকরা মাত্র এক বছরের মাথায় আলু সংরক্ষণ ভাড়া দ্বিগুণ করেছেন বলে চাষিদের অভিযোগ। হিমাগারে হিমাগারে নোটিশ ঝুলানোর পর থেকে সংরক্ষণ ভাড়া কমানোর দাবিতে চাষিরা উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন। এরই মধ্যে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে হিমাগার মালিক ও আন্দোলনকারী চাষিদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সরকারিভাবে সংরক্ষণ ভাড়া ৫ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ হিমাগার মালিক সরকারিভাবে নির্ধারণ করে দেওয়া এই ভাড়ার হারও মানছেন না। জানা গেছে, রাজশাহী আলুচাষি সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে সংরক্ষণ ভাড়া প্রত্যাহারের দাবিতে গত ডিসেম্বরে আন্দোলন জোরদার হলে তাকে একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায় মোহনপুর থানার পুলিশ। অভিযোগ রয়েছে, আন্দোলনকারী আলুচাষিদের নানাভাবে হয়রানি করছে প্রশাসন। এরপরও রাজশাহীর মোহনপুর, তানোর ও পবা এলাকার হাজার হাজার আলুচাষি ভাড়া কমানোর দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন। গত ২৮ ডিসেম্বর তানোরের হাজার হাজার আলুচাষি কয়েকটি হিমাগারের সামনে বিক্ষোভ করেন। এদিকে ২ ফেব্রুয়ারি আলুচাষিরা রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়ক অবরোধ করে সড়কে আলু ছিটিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। সর্বশেষ ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের নওহাটা এলাকার সরকার হিমাগারের সামনে সড়কে আলু ফেলে বিক্ষোভ করেন কয়েকশ চাষি। হিমাগার ভাড়া কমানোর দাবিতে ২৪ ফেব্রুয়ারি চাষিরা নাটোর-বগুড়া সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধার আলুচাষিরা গোবিন্দগঞ্জে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। একই দিনে রংপুরের আলুচাষিরা জাহাজ কোম্পানির মোড় এলাকা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। রংপুর আলুচাষি সংগ্রাম কমিটির আনোয়ার হোসেন বাবলু বলেন, অযৌক্তিকভাবে হিমাগার ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। ভাড়া না কমালে আলুচাষিরা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হবেন।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় ৩ লাখ ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ২৭ টন হিসাবে এই পরিমাণ জমি থেকে এবার প্রায় মোট ৯৮ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন আলু ফলনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আর্থিক মূল্যে এ পরিমাণ আলুর দাম কয়েক হাজার কোটি টাকা। উত্তরাঞ্চলের সর্বাধিক আলু উৎপাদনকারী জেলাগুলো হলো রাজশাহী, বগুড়া ও রংপুর।

উত্তরাঞ্চলে আলু সংরক্ষণের জন্য ২২১টি হিমাগার রয়েছে। এসব হিমাগারে আলু সংরক্ষণের সক্ষমতা ২৩ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন। কৃষি বিভাগের মতে, উত্তরাঞ্চলে উৎপাদিত মোট আলুর মাত্র ২৩ ভাগ সংরক্ষণ করা সম্ভব। বাকি ৭৫ লাখ ২৩ হাজার ২৮৮ মেট্রিক টন আলু সাময়িকভাবে গৃহপর্যায়ে সংরক্ষণ করা হয় ও কিছু আলু চলতি বাজারে বিক্রি করা হয়।

রাজশাহীর মোহনপুরের আলুচাষি আমিনুল হক কবিরাজ বলেন, চলতি মৌসুমে এক বিঘা আলু আবাদে চাষিদের ৫০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এরপরও রয়েছে পরিবহণ, শ্রমিকের মজুরি ও সংরক্ষণ ভাড়া। হিমাগার মালিকদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করলেও তারা ভাড়া না কমানোর সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন। রাজশাহী হিমাগার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান বলেন, আলু সংরক্ষণে বিভিন্ন খরচ বাড়ায় তারা ভাড়া বাড়িয়েছেন। তিনি দাবি করেন, চাষিদের মাঝে ঢুকে কিছু মধ্যস্বত্বভোগী প্রতি বস্তায় ৫০ কেজির বদলে ৭০ থেকে ৮০ কেজি আলু ঢুকিয়ে হিমাগারে পাঠায়। এতে সংরক্ষণ খরচ বাড়ে। আমরা কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশান থেকে প্রতি কেজি ৮ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করেছি। কোনো হিমাগার মালিক যদি কম নিতে পারে তাতে আমরা আপত্তি করব না। চাষিরা আন্দোলন করলেও আমরা ভাড়া কমাতে পারছি না। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মোতালেব হোসেন বলেন, হিমাগার ভাড়ার বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন পর্যায়ে একাধিকবার বৈঠক করা হয়েছে। প্রশাসন থেকে ভাড়ার হার ঠিক করে দেওয়া হয়েছিল। সেটা হিমাগার মালিক অ্যাসোসিয়েশান ও আন্দোলনকারী চাষিরা গ্রহণ করেননি। ভাড়া না কমলে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম উদ্দিন ও জেলা প্রশাসক আফিয়া আকতারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কথা বলেননি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম