বনশ্রীতে স্বর্ণ ডাকাতিতে ছাত্রলীগ ও শ্রমিক দল নেতা
ছয়জন রিমান্ডে

যুগান্তর প্রতিবেদন ও বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় ব্যবসায়ীকে গুলি করে স্বর্ণ ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ছয়জনের মধ্যে দুজনের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফলে। এদের মধ্যে একজন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সদস্য আমিনুল ইসলাম ও অন্যজন শ্রমিক দল নেতা সুমন মোল্লা। ছাত্রলীগের আমিনুল পেশাদার ডাকাত। এর আগেও তাকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ ডাকাতি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল। শনিবার তাদের গণমাধ্যমের সামনে হাজির করার পর স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে এ তথ্য পাওয়া যায়।
আমিনুল বাউফল উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের নতুন ইউনিয়ন পরিষদ এলাকার বাসিন্দা ইকবাল মৃধার ছেলে। তিনি উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য। এছাড়া গ্রেফতার সুমন মোল্লা একই ইউনিয়নের আয়নাবাজ কালাইয়া গ্রামের শাহজাহান মোল্লার ছেলে। তিনি কালাইয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড শ্রমিক দলের সহ-দপ্তর সম্পাদক। এর আগে ছাত্রলীগ নেতা আমিনুল একাধিক ডাকাতির ঘটনায় সরাসরি নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন। একের পর এক ডাকাতির ঘটনার পর জেলা পুলিশের কয়েকটি টিমের যৌথ তদন্তে আমিনুল আন্তঃবিভাগ ডাকাত দলের সদস্য হিসাবে শনাক্ত হয়। ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর আমিনুলসহ ডাকাত দলের সাত সদস্যকে আটক করেছিল পুলিশ। ডাকাত দলকে আশ্রয় দেওয়াসহ অস্ত্রের জোগানদাতাও ছিলেন আমিনুল। এছাড়া একাধিক ডাকাতির নেতৃত্বেও ছিলেন তিনি। পটুয়াখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কাছে জবানবন্দিতে এ অভিযোগ স্বীকার করেছিলেন আমিনুল।
বিভিন্ন সূত্র থেকে ওই দুজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে তাদের পরিচয় জানাতে গিয়ে কেউ নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি হননি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে ব্যস্ত থাকতেন আমিনুল। স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে পরিচিত ও প্রভাবশালী নেতা তিনি। আমিনুল গ্রেফতারের পর তার সঙ্গে সাবেক চিফ হুইপ ও পটুয়াখালী-২ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য আ স ম ফিরোজের সঙ্গে একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। বাউফল উপজেলা শ্রমিক দলের আহ্বায়ক হাসান মাহমুদ মঞ্জু বলেন, আমি সুমনকে চিনি না। তিনি কমিটিতে কীভাবে এলেন বলতে পারছি না। তবে ইউনিয়ন শ্রমিক দলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাকে বহিষ্কারের জন্য।
বাউফল থানার পরিদর্শক আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমিনুল পেশাদার ডাকাত এবং তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এর আগেও তাকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়েছিল।’
ছয়জন রিমান্ডে : বনশ্রীতে ব্যবসায়ীকে গুলি করে স্বর্ণ ডাকাতির ঘটনায় ছয়জনকে তিন দিনের রিমান্ড নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। রিমান্ডে যাওয়া আসামিরা হলেন-মো. কাউছার, মো. ফরহাদ, মো. খলিলুর রহমান, সুমন মোল্লা, দুলাল চৌধুরী ও আমিনুল। রোববার শুনানি নিয়ে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলম এ আদেশ দেন। এদিন আসামিদের ঢাকার সিএমএম আদালতে উপস্থিত করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে প্রত্যেকের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ও রামপুরা থানার উপপরিদর্শক ফরিদুর রহমান। এর আগে শুক্রবার দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় তাদের কাছ থেকে লুট হওয়া স্বর্ণের মধ্যে ৪ ভরি ৯ আনা স্বর্ণ, বিক্রীত স্বর্ণের মূল্য বাবদ ২ লাখ ৪৪ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত একটি ৭.৬২ এমএম রিভলবার, ৪ রাউন্ড গুলি ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। এই ডাকাত দলে সাতজন ছিলেন। অন্যজনকে ধরতে অভিযান চলছে বলে রামপুরা থানা সূত্রে জানা যায়।