Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

ডিবি হারুন ও তার ভাইয়ের ১৩০ বিঘা জমি ও ৫ ভবন জব্দ

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ডিবি হারুন ও তার ভাইয়ের ১৩০ বিঘা জমি ও ৫ ভবন জব্দ

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক প্রধান হারুন অর রশিদের ১০০ বিঘা জমি, পাঁচটি ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট জব্দ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এসব হিসাবে হারুনের জমা রয়েছে ১ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকা। পাশাপাশি তার ভাই শাহারিয়ারের ৩০ বিঘা জমি জব্দ, ১১টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ ও তিনটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত বুধবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।

দুদকের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, দুদকের উপপরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন পৃথক দুটি আবেদনে হারুন ও তার ভাইয়ের স্থাবর সম্পদ জব্দ ও অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ চেয়ে আবেদন করেন। পরে আদালত শুনানি নিয়ে আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।

জব্দ ও অবরুদ্ধ হওয়া সম্পদের মধ্যে হারুন অর রশিদের নামে ঢাকার উত্তরায় ৭.৪৫ কাঠা জমিতে ৩ কোটি টাকা মূল্যের একটি ইমারত রয়েছে। এছাড়া গুলশানে ১০.৩৬ শতক জমিতে ৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকার আরেকটি ইমারত রয়েছে। এছাড়া ঢাকার কুড়িলে সেমিপাকা একটি টিনশেড বাড়ি, খিলক্ষেতে ১ তালা একটি দালান ও সেমিপাকা আরেকটি টিনের বাড়ি রয়েছে হারুনের নামে। এসব ভবন জব্দ করার আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া হারুনের নামে উত্তরায় ১০ নম্বর সেক্টরে ৭ তালা ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি ফ্ল্যাট ও জোয়ার সাহারায় ৬ তলা ভবনের ষষ্ঠ তলায় আরেকটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এ দুই ফ্ল্যাটসহ আশিয়ান সিটিতে হারুনের নামে ৫ কাঠার একটি প্লট জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। 

অন্যদিকে হারুনের নামে কিশোরগঞ্জ, কক্সবাজার ও নারায়ণগঞ্জে ৯৯ দশমিক ১৮ বিঘা জমি জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু কিশোরগঞ্জেই হারুনের নামে ৯১ দশমিক ৩২ বিঘা জমি রয়েছে।

এছাড়া তার ভাই শাহারিয়ারের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত ৩০ বিঘা জমি জব্দ ও ১১টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি শাহারিয়ারের তিনটি কোম্পানির শেয়ারও অবরুদ্ধ করা হয়েছে। 

ডিবি হারুনের আবেদনে বলা হয়, আসামি মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ ১৭ কোটি ৫১ লাখ ১৭ হাজার টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগদখলে রাখার অভিযোগে মামলা হয়েছে।

শাহরিয়ারের আবেদনে বলা হয়েছে, আসামি এবিএম শাহারিয়ার ১২ কোটি ৯৬ লাখ ৮৭ হাজার ৬০৪ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগদখলে রেখেছেন। আসামি মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিবি প্রধানের পদসহ বাংলাদেশ পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে তাকে অপরাধে প্রত্যক্ষ সহায়তা করায় মামলা হয়েছে। 

সাবেক মন্ত্রী নসরুল হামিদের স্ত্রীর ২০ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ : সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ও তার স্ত্রী সীমা হামিদের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা ২০টি হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব ব্যাংক হিসাবে ২ কোটি ১০ লাখ ৯৭ হাজার ১১৬ টাকা রয়েছে। বুধবার দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব। দুদকের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এছাড়াও পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি গাজী মো. মোজাম্মেল হকের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা ৬৭টি হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এসব হিসাবে ১৭ কোটি ২০ লাখ টাকা রয়েছে।

সাবেক ৬ মন্ত্রীসহ ১০ জন রিমান্ডে : আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ছয় মন্ত্রীসহ ১০ জনের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলামের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। রিমান্ডে যাওয়া আসামিরা হলেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটনমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফারুক খান, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার, সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) তানভীর সালেহীন ইমন, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্মসাধারণ সম্পাদক বেনজির হোসেন নিশি, ছাত্রলীগ নেতা কাউসার ও রমজান। 

সাবেক মন্ত্রী রেজাউল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা : প্রায় ১২ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ৭ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ও স্ত্রী ফিরোজা পারভীনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার কমিশনের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এ তথ্য জানান। আসামিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে অভিযোগ আনা হয়েছে।

স্ত্রী-মেয়েসহ সাবেক এমপি তানভীর ইমামের ৬৯টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ : সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা প্রয়াত এইচটি ইমামের ছেলে তানভীর ইমাম, তার স্ত্রী মাহিন ইমাম ও মেয়ে মানিজা ইসমত ইমামের নামে থাকা ৬৯টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব হিসাবে ২০ কোটি ২৯ লাখ ৭৯ হাজার টাকা রয়েছে। এর মধ্যে তানভীরের নামে ৫৮টি, তার স্ত্রী মাহিনের তিনটি ও মেয়ে মনিজার আটটি হিসাব রয়েছে। এছাড়া তাদের নামে থাকা স্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দেওয়া হয়েছে। বুধবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর জৈষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

পুলিশ কর্মকর্তা মোজাম্মেলের ৬৫ বিঘা জমি জব্দ : পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি গাজী মো. মোজাম্মেল হকের নামে থাকা ৬৫ বিঘা জমি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব জমির মূল্য দুই কোটি ১৯ লাখ ৩২ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। বুধবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

এছাড়া তার স্ত্রী ফারজানা মোজাম্মেলের নামে থাকা দুই কোটি ৭৬ লাখ টাকা মূল্যের ১২টি দলিলের জমি ও সন্তান গাজী বুশরা তাবাসসুমের নামে থাকা ৭৯ লাখ ৮৩ হাজার টাকা মূল্যের ১০টি দলিলের জমি জব্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের নামে থাকা ২৮টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এসব হিসাবে ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৬৩ হাজার টাকা রয়েছে। দুদকের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল মালেক এসব সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেন। 

আবেদনে বলা হয়েছে, গাজী মো. মোজাম্মেল হক ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে সরকারি চাকরীজীবী হয়েও অবৈধভাবে ব্রিজ ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যানসহ নয়টি প্রতিষ্ঠানের মালিকানা অর্জন, বাড়ি দখল, রিমান্ডে নির্যাতন করে জমি লিখে নেওয়া, অবৈধভাবে নদী ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। এভাবে তিনি নিজ নামে, তার স্ত্রী ফারজানা মোজাম্মেল ও সন্তান গাজী বুশরা তাবাসসুমমের নামে ৬৭টি ব্যাংক হিসাবে ৪৯৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা জমা করেন। এর মধ্যে ৪৮৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা উত্তোলন ও বর্তমানে ১৭ কোটি ২০ লাখ টাকা স্থিতি রয়েছে। অবৈধ আয় ব্যাংকিং চ্যানেলে অন্তর্ভুক্ত করে অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনে সম্পৃক্ত অপরাধপূর্বক বিদেশে অর্থ পাচার এবং পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগটি অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অনুসন্ধানকালে অভিযোগ গাজী মো. মোজাম্মেল হকের নিজ নামে ও স্ত্রী এবং সন্তানদের নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে স্থাবর জব্দ ও অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করা আবশ্যক।


Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম