Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

বাতিল করা হয়েছে পাসপোর্ট

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামসহ ৯ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের অনুকূলে ইস্যুকৃত কূটনৈতিক এবং অফিসিয়াল পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত সপ্তাহে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়। ইতোমধ্যে তাদের পাসপোর্ট বাতিল সংক্রান্ত বিশেষ চিঠি দেশের সব বিমান, স্থল ও নৌবন্দরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

শিবলী রুবাইয়াত ছাড়াও পাসপোর্ট বাতিলের তালিকায় থাকা অন্য ৮ কর্মকর্তা হলেন- বিএসইসির সাবেক কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম, সাইফুর রহমান, রেজাউল করিম, পরিচালক শেখ মাহবুব উর রহমান, মোহাম্মদ মাহমুদুল হক, অতিরিক্ত পরিচালক লুৎফুল কবির এবং চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব মো. রাশিদুল আলম। এদের বিরুদ্ধে সাবেক সরকারের আমলে শেয়ারবাজার কারসাজি এবং কৃত্রিম উপায়ে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে শত কোটি টাকা লুটে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

জানা যায়, গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত এবং তার সহযোগী ৮ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও প্রতারণার অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। প্রাথমিক তথ্যে উল্লেখ করা হয়, ওই ব্যক্তিরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। উৎস-বহির্ভূতভাবে এক হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ স্থাবর-অস্থাবর অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। এ ছাড়া তারা আইন ও বিধিমালা লঙ্ঘন করে নিজ নামে ও তাদের পরিবার-পরিজনের নামে-বেনামে বিদেশে অর্থপাচার করেছেন। যেসব দেশে পাচার করা হয় সেগুলো হলো-সংযুক্ত আরব আমিরাত, কানাডা, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে। বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসাবে শিবলী রুবাইয়াতের দ্বিতীয় দফা নিয়োগ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের বিরোধিতা ছিল। কিন্তু ওই সময়ে ব্যাপক ক্ষমতাধর ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের তদবিরে নিয়োগ পান শিবলী। এক্ষেত্রে সালমান এফ রহমানকে শেয়ারবাজার থেকে ৬ হাজার ৬শ কোটি টাকার সুবিধা দেওয়া হয়। শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষ পদে বসে বেআইনিভাবে শেয়ার ব্যবসা করেছেন শিবলী রুবাইয়াত। এক্ষেত্রে তার কারসাজির অন্যতম সহযোগী ছিলেন সমবায় অধিদপ্তরের আবুল খায়ের হিরু। সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি এলআর গ্লোবালকে একের পর এক বিতর্কিত সুবিধা দিয়েছেন শিবলী। এলআর গ্লোবালের সিইও রিয়াজ ইসলামের সঙ্গে দুবাইয়ে সিগমা ম্যানেজমেন্ট নামে যৌথ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন তিনি। ওই কোম্পানির পার্টনার শিবলীর বড় ছেলে যুহায়ের ইসলাম।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জাবেদ এ মতিন নামে একজন ব্যবসায়ী হংকংয়ের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১ কোটি ৩৪ লাখ ডলার হাতিয়ে নেন।

এই প্রতারণার অর্থ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আনা হয়। এক্ষেত্রে অধ্যাপক শিবলীর প্রত্যক্ষ সহায়তার তথ্য মিলেছে।

জানা যায়, বিএসইসির চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পাওয়ার সময়ই শিবলী ঋণখেলাপি ছিলেন। অর্থঋণ আদালতের এক মামলায় ২০০৭ সাল থেকে টানা প্রায় ১৬ বছর তার গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল। কিন্তু প্রভাবে দাপটেই ছিলেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় অনুষদের ডিন থাকাকালে অনৈতিকভাবে ডাকসুর ৮ নেতাসহ ৩৪ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করান। এ ছাড়া শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, শেখ শামসুদ্দীন আহমেদ, নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান ও আবুল খায়ের হিরু মিলে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বন্ধ থাকা কোম্পানি অবৈধভাবে দখল করেন। এক্ষেত্রে বন্ধ কোম্পানি চালু করার নামে পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নিজস্ব লোকদের নতুন পরিচালনা পর্ষদে নিয়োগ দিয়ে দখল করেন বেশকিছু কোম্পানি। এর মধ্যে এমারেল্ড অয়েলের পর্ষদ ভেঙে মিনোরি বাংলাদেশকে মালিকানা দিয়ে শেয়ার কারসাজি করে শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ৫ আগস্ট হাসিনা সরকার পতনের পর সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ-সদস্য ছাড়াও শতাধিক প্রভাবশালী সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তার পাসপোর্ট বাতিল করা হয়। এর মধ্যে শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা রয়েছেন। এছাড়া পাসপোর্ট বাতিলের তালিকায় হাসিনার কয়েকজন উপদেষ্টা, সিনিয়র সাংবাদিক, গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান এবং বিদেশি মিশনে দায়িত্বপালনকারী বেশ কয়েকজন কূটনীতিকের নাম রয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম