ডেইলি মেইলের প্রতিবেদন
টিউলিপকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের চাপ বাড়ছে
‘টিউলিপের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মুখোমুখি হওয়া উচিত’
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বড় ধরনের দুর্নীতির তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে টিউলিপ সিদ্দিককে যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের চাপ বাড়ছে। বাংলাদেশের এক রাজনীতিবিদ মনে করেন, সাবেক লেবার এমপির ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মুখোমুখি হওয়া উচিত।’ কারণ বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত চলছে। বুধবার বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ ববি হাজ্জাজের বরাত দিয়ে ডেইলি মেইল এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
‘কলস ফর টিউলিপ সিদ্দিক টু বি এক্সট্রেডিটেড টু বাংলাদেশ আফটার মেজর করাপশন প্রোব অ্যাজ অপজিশন লিডার্স সেস ফরমার লেবার এমপি শুড কাম অ্যান্ড ফেস ল’ ইনফোর্সমেন্ট’ শিরোনামে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বাংলাদেশ সরকার ও দুদকের কাছে যুক্তরাজ্য থেকে টিউলিপ সিদ্দিককে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের সাবেক দুর্নীতিবিরোধী বিষয়ক মন্ত্রী টিউলিপ গত সপ্তাহে তার পদ থেকে সরে দাঁড়ান। টিউলিপকে নিয়ে ব্রিটিশ রাজনৈতিক অঙ্গনে কড়া সমালোচনা ও মিডিয়াগুলোর ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশের এক পর্যায়ে ১৪ জানুয়ারি তিনি দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। পদত্যাগের পর তিনি বলেন যে, তিনি ব্রিটিশ সরকারের কাজে বাধা হয়ে দাঁড়াতে চান না।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টিউলিপের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তিতে মধ্যস্থতায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। যেখানে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এমপি থাকাকালীন তার পরিবারের সদস্যদের অবৈধভাবে জমি বরাদ্দের ঘটনায় দ্বিতীয় তদন্তে টিউলিপ সিদ্দিকের নাম এসেছে।
এসব অভিযোগের পর ববি হাজ্জাজ তাকে (টিউলিপ) ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মুখোমুখি’ করার জন্য বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের আহ্বান জানান।
হাজ্জাজ গুইডো ফকসকে (ব্রিটিশ-আইরিশ রাজনৈতিক ব্লগার পল স্টেইনস প্রকাশিত একটি ডানপন্থি রাজনৈতিক ওয়েবসাইট) বলেন, টিউলিপের যুক্তরাজ্য এবং বাংলাদেশ উভয় দেশের জন্য দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে। হাজ্জাজ বলেন, বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) তাকে ফিরে আসতে নির্দেশ দেওয়ার অনুরোধ করবেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে আমরা অবশ্যই দুদক এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে টিউলিপকে ফিরিয়ে এনে দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মুখোমুখি হতে বা এখানে আদালতের মুখোমুখি করতে চাপ দেব।’
হাজ্জাজ আরও দাবি করেন, ‘লেবার সরকার ‘স্বৈরাচারী শাসনের আস্থাভাজনদের দ্বারা ব্যাপকভাবে সমর্থিত। লেবার এবং আওয়ামী লীগ দল প্রায় সহযোগী দলের মতো এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি তারা খুব ভালোভাবে জানে।’
ব্রিটিশ সরকার টিউলিপকে প্রত্যর্পণের আদেশ মেনে চলার জন্য অনুরোধ করবে কি না জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের মুখপাত্র গুইডো ফকসকে বলেন, তারা ‘কল্পনাপ্রসূত কোনো কিছু বলবেন না।’
ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, টিউলিপ সিদ্দিকের খালা শেখ হাসিনার শাসনামলের সঙ্গে সংযোগ নিয়ে সংকট মোকাবিলায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্রিটিশ মিডিয়াসহ আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে টিউলিপ সিদ্দিককে নিয়ে নেতিবাচক শিরোনাম হলেও তার বিদায়ের আগের দিন, ১০নং ডাউনিং স্ট্রিট তার ওপর ‘পূর্ণ আস্থা’ প্রকাশ করেছিল।
টিউলিপ সিদ্দিক খালার সঙ্গে সম্পর্কিত সম্পত্তির ব্যবহার নিয়ে ক্রমবর্ধমান প্রশ্ন ওঠার পর নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর নীতিশাস্ত্র উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাসের কাছে জবাবদিহিতে বাধ্য হন। এরপর টিউলিপ মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন এবং পেনশন মন্ত্রী এমা রেনল্ডসকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়।
চীনা ব্যবসায়িক কার্যকলাপের ওপর বিধিনিষেধ কমাতে ব্রিটেনে গত সরকারের বিরুদ্ধে তদবিরের অভিযোগ প্রকাশের পরই টিউলিপের নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু হয়।
টোরি নেতা কেমি ব্যাডেনোচ প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের বিরুদ্ধে টিউলিপ সিদ্দিককে মন্ত্রিত্ব দেওয়ার ব্যাপারে ‘দুর্বল’ নেতৃত্বের অভিযোগ আনেন এবং মন্ত্রীর (টিউলিপ) সঙ্গে তার বন্ধুত্বের কারণে তিনি প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত করেছেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
কেমি ব্যাডেনোচ বলেন, ‘সপ্তাহান্তে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে টিউলিপ দুর্নীতি দমন মন্ত্রীর পদে সম্পূর্ণরূপে অযোগ্য। তবুও কিয়ার স্টারমার তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে রক্ষা করার জন্য দ্বিধাগ্রস্ত এবং বিলম্ব করেছেন। আর বাংলাদেশ যখন টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছে, তিনি তার অনিবার্য পদত্যাগে ‘দুঃখ’ প্রকাশ করেছেন। কিয়ার স্টারমারের এ ধরনের কার্যকলাপকে কেমি, ‘একজন দুর্বল প্রধানমন্ত্রীর দুর্বল নেতৃত্ব’ বলে উল্লেখ করেন।
ব্রিটিশ ইনস্টিটিউট ফর গভর্নমেন্ট এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করে বলেছে, এই বিরোধ মোকাবিলায় দেখা গেছে যে, লেবার এখনো সরকারের তদন্তে অভ্যস্ত নয়। নীতিশাস্ত্র এবং সততার ক্ষেত্রে গত সরকারের ব্যর্থতার জন্য এত দ্রুত সমালোচনা করার পর, স্টারমার এবং তার দলকে দেখাতে হবে যে তারা ক্ষমতায় আসার পর যে মানদণ্ড বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা পূরণের গুরুত্ব তারা সত্যিই বোঝেন।
লিবারেল ডেমোক্র্যাট মুখপাত্র সারাহ ওলনি বলেন, ‘এটা ঠিক যে টিউলিপ সিদ্দিক পদত্যাগ করেছেন। দুর্নীতির কেলেঙ্কারিতে জাড়িত এমন একজনকে আপনি দুর্নীতি দমন মন্ত্রী হিসাবে বহাল রাখতে পারেন না।’