চট্টগ্রামে জনতা ব্যাংক সিবিএ নেতা আফসার
আ.লীগের আমলে দাপট দেখিয়ে এখন বিএনপি
নিয়োগ, বদলি, চাঁদাবাজি করে কামিয়েছেন টাকা
এমএ কাউসার, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আওয়ামী লীগের সময়ে নানারকম অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে জনতা ব্যাংক গণতান্ত্রিক কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল আফসারের বিরুদ্ধে। সংগঠনটির ব্যানারে ২০১৭ সাল থেকে গণঅভ্যুত্থানের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নানা কর্মসূচি পালন করেছেন এই সিবিএ নেতা। এসব অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। এর বাইরে কর্মচারীদের বদলি, অস্থায়ী নিয়োগ ও হাউজ বিল্ডিং লোন পাশ করানোর মাধ্যমে গত ৭ বছরে অন্তত অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। গণঅভ্যুত্থানের পর তাকে ‘চট্টগ্রাম সি’ জোনে বদলি করা হয়। তবে বর্তমানে তিনি বিএনপিপন্থি কর্মচারী ইউনিয়নে যোগ দিয়েছেন বলে দাবি করেন। জাতীয়তাবাদী কেন্দ্রীয় সিবিএ নেতার তদবিরে গত এক মাসেও তার বদলির আদেশ কার্যকর হচ্ছে না। এ নিয়ে চট্টগ্রামের জনতা ব্যাংক কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৮৮ সালে গোডাউন কিপার হিসাবে অস্থায়ী ভিত্তিতে চাকরিতে প্রবেশ করেন মোহাম্মদ নুরুল আফসার। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার দুই বছর পরই জনতা ব্যাংক গণতান্ত্রিক কর্মচারী ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন সদস্যকে স্থায়ীকরণ করা হয়। সেই সময়ে নুরুল আফসারকেও স্থায়ী করা হয়েছিল। ২০১৭ সালে সংগঠনটির বিভাগীয় কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদ বাগিয়ে নেন তিনি। এরপর থেকে সংগঠনের ব্যানারে আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচি পালন করা শুরু হয়। চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের মাধ্যমে সংগঠনের কার্যালয়ে ১৫ আগস্ট, শেখ মুজিব, শেখ রাসেল, শেখ কামাল ও শেখ হাসিনার জন্মবার্ষিকী পালন করা হতো। এসব অনুষ্ঠান আয়োজনের নামে গত ৭ বছরে হাতিয়ে নিয়েছেন ২০ লাখ টাকা। এরমধ্যে কেবল মুজিব বর্ষ উদযাপনের নামেই হাতিয়ে নেন আট লাখ টাকা। বিভিন্ন কর্মচারীদের সুবিধামতো স্থানে বদলির জন্য নিতেন ৪০-৫০ হাজার টাকা করে। অস্থায়ী নিয়োগের জন্য নিতেন দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। কর্মচারীদের হাউজ বিল্ডিং লোন পাশ করানোর জন্য প্রতি জনের কাছ থেকে নিতেন অন্তত ৫০ হাজার টাকা। সবমিলিয়ে এসব খাত থেকে আরও ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন ভুক্তভোগীরা। জানা গেছে, ফেনী থেকে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া পর্যন্ত জনতা ব্যাংক কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণ করতেন নুরুল আফসার। কেন্দ্রীয় নেতাদের মাধ্যমে ব্রাঞ্চ ম্যানেজারদেরও বদলি করাতেন তিনি। ২০২২ সালে নিজের ছেলেকে নিয়োগ দিতে বাধ্য করেন জনতা ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার তৎকালীন ব্রাঞ্চ ম্যানেজারকে। পরবর্তীতে তার ছেলে আনাসুল ইসলাম আনাসকে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়।
নুরুল আফসারের দুর্নীতির বিষয়ে একই কমিটির সহ-সভাপতি সরোয়ার উদ্দিন বলেন, শেখ মুজিবের শাহাদত বার্ষিকীসহ নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন নুরুল আফসার। জনতা ব্যাংকের ব্রাঞ্চ ম্যানেজারসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে আট লাখ টাকা উঠানো হয়। কিন্তু করোনার কারণে মুজিব বর্ষ উদযাপন না হওয়ায় সেই টাকা নিজের পকেটে ঢুকিয়ে ফেলেন তিনি। এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করায় আমাকে চট্টগ্রাম থেকে মাদারীপুর বদলি করা হয়েছিল।
কার্যকরী সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, ‘বদলি ও অস্থায়ী নিয়োগ ছাড়াও নুরুল আফসারের সবচেয়ে বড় একটি আয়ের উৎস ছিল কর্মচারীদের হাউজ বিল্ডিং লোন পাশ করিয়ে দেওয়া। ইসহাক নামে এক দারোয়ানের কাছ থেকেও প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা নিয়েছেন তিনি।’
মোহাম্মদ নুরুল আফসার জনতা ব্যাংক পিএলসি আগ্রাবাদ শাখায় এওজি-১ হিসাবে কর্মরত রয়েছেন। গত ১৭ অক্টোবর তাকে চট্টগ্রাম-সি জোনে বদলি করা হয়। ২০ অক্টোবরের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের কথা থাকলেও এখনো তিনি পূর্বের কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ নুরুল আফসার বলেন, ‘আমরা সরকারি কর্মচারী। যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তখন সেই সরকারের কার্যক্রম পরিচালনা করি। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দিবসের নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়। এমনটি যদি হতো বর্তমান সিবিএ নেতারা আমার বদলির জন্য তদবির করত না। আমাকে রাখার জন্য কেন্দ্রীয় নেতা জিএমকে অনুরোধ করেছেন। বর্তমানে আমি জাতীয়তাবাদী কর্মচারী ইউনিয়নের সঙ্গে কাজ করছি।’