যমুনা টেলিভিশনে গোলটেবিল আলোচনা
ছাত্র রাজনীতি বন্ধ নয় সংস্কার চান শিক্ষার্থীরা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
যমুনা টিভি কার্যালয়ে শুক্রবার ‘শিক্ষাঙ্গনে গণতন্ত্রের চর্চা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা -যুগান্তর
শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি বন্ধের পক্ষে নন শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষাঙ্গনে চলমান কাঠামোর সংস্কার চান তারা। যেখানে কোনো রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা নয়, গুরুত্ব পাবে শিক্ষার্থীদের চাহিদা। ডাকসু নির্বাচন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করতে হবে। একই সঙ্গে দেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হলেই থাকবে না সিট বাণিজ্য, কোনো অবস্থাতেই অছাত্র হলে অবস্থান করবে না। এমনকি বহিরাগত কোনো শিক্ষার্থী হলে প্রবেশও করবে না।
শুক্রবার সকালে যমুনা টেলিভিশন কার্যালয়ে ‘শিক্ষাঙ্গনে গণতন্ত্রের চর্চা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। যৌথভাবে এর আয়োজন করে যমুনা টেলিভিশন ও ডেমক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল। অনুষ্ঠানের সহযোগিতায় ছিল ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি)।
যমুনা টেলিভিশনের প্লানিং অ্যান্ড অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর রোকসানা আনজুমান নিকোলের সঞ্চালনায় গোলটেবিল আলোচনায় আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম জহির উদ্দিন স্বপন, নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নাভিন মুরশিদ, যমুনা টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মানসুরা আলম, ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মো. আবু সাদিক কায়েম, ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক অর্নি আনজুম ও ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুসরাত জাহান শামামা।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি না থাকলে ক্ষতি কী, থাকলে ক্ষতি কী-মনে রাখতে হবে ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজন তখনই পড়েছে, যখনই দেশে সংকট তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থী আন্দোলন পরিবর্তনের হাতিয়ার-শক্তিও। আদর্শের রাজনীতি সক্রিয় করতে হলে নিয়মিত ডাকসু নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা পরিষদের মিটিং নিয়মিত হওয়া দরকার। মনে রাখতে হবে এ পরিষদে এমন কেউ থাকবে-যিনি ছাত্রদের কাছে গ্রহণযোগ্য। জাতীয় রাজনীতিতে তাকে অংশগ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, জাতীয় রাজনীতিতে যদি ন্যূনতম ঐকমত্য না থাকে তবে ছাত্র রাজনীতিতে তার প্রতিফলন সম্ভব নয়।
ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ছাত্র রাজনীতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে ভূমিকা থাকতে হবে। শিক্ষার মান থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যকর খাবারের দিকে শিক্ষার্থীদের নজর থাকতে হবে। অন্যায়-অপরাধের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সোচ্চার থেকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ-প্রতিবাদ জানাতে হবে।
এম জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরসহ সব কয়টি ছাত্র সংগঠনের একটি এজেন্ডা থাকা সবচেয়ে জরুরি। শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র রাজনীতি হবে আদর্শের-ন্যায়-নীতির। সবাইকে জানতে হবে তারা কতটুকু করবে-কতটুকু করতে পারবে না। একটি সীমারেখার মধ্যে রাজনৈতিক চর্চা শিক্ষা, দেশ ও দেশের কল্যাণে করে যেতে হবে।
মো. আবু সাদিক কায়েম বলেন, ছাত্র রাজনীতি হবে ছাত্রদের কল্যাণে-আদর্শের। ছাত্র রাজনীতি যেন এমন না হয়, জোর করে সব কিছু করিয়ে নেওয়া। জোর করে সভা-মিছিলে ধরে নিয়ে যাওয়া। ছাত্র রাজনীতি যেন শোডাউনের না হয়। ছাত্র রাজনীতি যেন বিনা টাকায় না খাওয়া হয়। ছাত্র রাজনীতি চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি যেন না হয়। আমরা বলছি, ’২৪ ছাত্র আন্দোলনের পর ছাত্র রাজনীতিতে যৌক্তিক সংস্কার চাই। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের দাবি-আইডিয়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে যাবে, শিক্ষার্থীরা যাদের আইডিয়া পছন্দ করবে তাদের সঙ্গে যুক্ত হবে। এটাই হবে আদর্শের রাজনীতি।
উমামা ফাতেমা বলেন, রাষ্ট্র সিদ্ধান্ত নিতে পারে না-শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি থাকবে না। তবে আজকের যে দলীয় লেজুড়বৃত্তির ছাত্র রাজনীতি শুরু হয়েছে-তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। শিক্ষাঙ্গনে একেক জায়গায় একেক রকম পরিবেশ। মনে রাখতে হবে, শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি বন্ধ নয়, চলমান কাঠামোর সংস্কার করতে হবে এবং শিক্ষার্থীরা ওই সংস্কারই চাচ্ছেন।
গোলটেবিল বৈঠকে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন যমুনা টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. নাভিন মুরশিদ, অর্নি আনজুম, মানসুরা আলম ও নুসরাত জাহান শামামা।