Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

গবেষণা প্রতিবেদনে তথ্য

জলবায়ু ও অর্থনীতির ঝুঁকি তৈরি করছে এলএনজি

প্রস্তাবিত এলএনজি বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ অবকাঠামোর পরিকল্পনা প্রত্যাহার দাবি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশের জলবায়ু ও অর্থনীতির জন্য বিদেশিদের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ঝুঁকি তৈরি করছে। আমদানি করা এলএনজি ইতোমধ্যেই বিদ্যুৎ সংকট এবং রোলিং ব্ল্যাকআউটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। তাই সব ধরনের প্রস্তাবিত এলএনজি বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং এলএনজি আমদানি অবকাঠামো পরিকল্পনা প্রত্যাহার করতে হবে।

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ব্যয়বহুল এলএনজির বিস্তার : বিদেশিদের এলএনজি সংক্রান্ত স্বার্থ যেভাবে বাংলাদেশের জন্য জলবায়ু ঝুঁকি তৈরি করছে’ শিরোনামে গবেষণা ওই প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে মার্কেট ফোর্সেস, ফসিল ফ্রি চট্টগ্রাম, ধরা, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন এলএনজি প্রকল্প এবং আমদানি টার্মিনালগুলোর জন্য বাংলাদেশকে প্রায় ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করতে হবে। এই প্রকল্পগুলোর কারণে দেশের অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়বে, একই সঙ্গে দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব যেমন বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে লাখ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখীন হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের জনগণ বিদ্যুৎ খরচের চাপে রয়েছে এবং ব্যয়বহুল আমদানি করা এলএনজির ওপর নির্ভরতা অব্যাহত থাকলে এ পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। তাই এলএনজির ওপর ৫০ বিলিয়ন ডলারের এ বিনিয়োগের পরিবর্তে বাংলাদেশ ৬২ গিগাওয়াট (৬২ হাজার মেগাওয়াট) নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করতে পারে, যা দেশের বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার দ্বিগুণ।

প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে যে, প্রস্তাবিত ৪১টি নতুন গ্যাস চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হবে, যা শ্বাসযন্ত্রের সমস্যাগুলোর প্রকোপ বাড়াবে এবং বায়ু দূষণের ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম খারাপ অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে নিয়ে যাবে।

সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠানে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান এবং ধরা’র উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদারের সভাপতিত্বে প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন মার্কেট ফোর্সেসের এশিয়া অ্যানার্জি অ্যানালিস্ট মুনিরা চৌধুরী। আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা, ইন্সটিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের এনার্জি ফর বাংলাদেশের লিড অ্যানালিস্ট শফিকুল আলম, মার্কেট ফোর্সেস’র এশিয়া এনার্জি ফাইন্যান্স ক্যাম্পেইনার মেগু ফুকুজাওয়া এবং থ্রিফিফটি ডট ওআরজি সাউথ এশিয়ার মোবিলাইজেশন কো-অর্ডিনেটর আমানুল্লাহ পরাগ প্রমূখ। সঞ্চালনা করেন ধরা’র সদস্য সচিব শরীফ জামিল। মার্কেট ফোর্সেসের এশিয়া এনার্জি বিশ্লেষক এবং প্রতিবেদনের লেখক মুনিরা চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য শক্তিতে ২৪০ গিগাওয়াট (২৪০,০০০ মেগাওয়াট) সৌর এবং ৩০ গিগাওয়াট (৩০,০০০ মেগাওয়াট) উপকূলীয় বায়ুশক্তির বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা নীতিনির্ধারকদের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি যে, পরিকল্পিত এলএনজি প্রকল্পগুলোর তহবিল নবায়নযোগ্য শক্তি ও গ্রিড উন্নয়নের দিকে পুনঃনির্দেশ করা হোক।

ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, এই গ্যাস ও এলএনজি প্রকল্পগুলো আমাদের জনগণের সম্পদ দখল করে গড়ে উঠেছে। যারা এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ধরা’র সদস্য সচিব শরীফ জামিল বলেন, জাইকা এবং আইইইজে প্রণীত ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টার প্ল্যান (আইইপিএমপি) অবশ্যই সংশোধন করা উচিত। কারণ এটি বাংলাদেশকে এলএনজির ওপর নির্ভরশীল করার দিকে ঠেলে দিচ্ছে, যা দেশের জ্বালানি নিরাপত্তাকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো জলবায়ু বিপর্যয়ের জন্য দায়ী। এজন্য বাংলাদেশি পরিকল্পনাগুলো গ্রহণ করতে হবে, আর বিদেশিদের প্রস্তুত করা সব পরিকল্পনা বাতিল করতে হবে। ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দেশে বিদ্যুৎকেন্দ্র যা আছে তার মধ্যে দিয়ে চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রের দরকার নেই। ২০৪১ সাল নাগাদ ২৭ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ প্রয়োজন নেই। শফিকুল আলম বলেন, এলএনজির কারণে আমরা অর্থনৈতিক বোঝার মধ্যে পড়ছি। আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনতে হবে। আমাদেরকে এনার্জি এফিসিয়েন্সি বাড়াতে হবে এবং গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে।

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম