সাবেক এমপিসহ ৮ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বগুড়া-৩ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য মো. নুরুল ইসলাম তালুকদার ও ঢাকা-১৮ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য মোহাম্মদ হাবিব হাসানসহ ৮ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার দুদকের চারটি পৃথক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভারপ্রাপ্ত মহানগর দায়রা জজ ইব্রাহিম মিয়া এ আদেশ দেন। দুদকের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
সাবেক সংসদ-সদস্য মো. নুরুল ইসলাম তালুকদারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন দুদকের উপপরিচালক মো. মাসুদুর রহমান। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর এ বিষয়ে শুনানি করেন। পরে আদালত আদেশ দেন। আবেদনে বলা হয়, নুরুল ইসলাম তালুকদারের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির সাধ্যমে টিআর কাবিখাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সরকারি অর্থ আত্মসাৎপূর্বক নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তার পদের অপব্যবহার করে ও রাজনৈতিক পরিচয়ের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ও বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। বিশ্বস্ত সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে, দেশের বর্তমান বাস্তবতায় নুরুল ইসলাম তালুকদার দেশ ত্যাগ করতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তার বিদেশ গমন রহিত করা আবশ্যক।
আর সাবেক সংসদ-সদস্য মোহাম্মদ হাবিব হাসান, তার স্ত্রী শামিমা হাবিব, দুই সন্তান আবুর হাসান তানিম ও সনিয়া হাসান তন্নির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। দুদকের উপপরিচালক সিরাজুল হক তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, হাবিব হাসানের বিরুদ্ধে ভূমি দস্যুতা, পরিবহণ চাঁদাবাজি, পদ বাণিজ্য, ডোনেশনের নামে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎপূর্বক বিদেশে অর্থ পাচার করে ছেলের নামে কানাডায় বাড়ি ক্রয়সহ নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগটি অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগ অনুসন্ধানে মামলা রুজু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অনুসন্ধানের বিষয়টি রাষ্ট্রের স্বার্থে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তারা বিদেশে পলায়ন করতে পারেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমন রহিতকরণ প্রয়োজন।
এছাড়া সাবেক কর কমিশনার রঞ্জিত কুমার তালুকদার ও তার স্ত্রী ঝুমুর মজুমদারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। দুদকের সহকারী খোরশেদ আলম তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন। পরে আদালত আদেশ দেন।
আবেদনে বলা হয়, রঞ্জিত কুমারের বিরুদ্ধে ঘুস গ্রহণ, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎপূর্বক নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগটি অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। রঞ্জিত কুমার তালুকদার তার অবৈধ আয়ে নিজ এলাকায় কৃষি জমি, ফ্ল্যাট, প্লট ক্রয় এবং তার স্ত্রী ঝুমুর মজুমদারের নামে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেডে ২২টি এফডিআর হিসাবের অনুকূলে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা রয়েছে। তাছাড়া অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার টাকা জমা করা আছে বলে জানা যায়। গোপন অনুসন্ধানে জানা যায় তার ভারতেও স্থাবর সম্পদ রয়েছে। রঞ্জিত কুমার তালুকদার এবং তার স্ত্রী কুমুর মজুমদার অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি হস্তান্তর করে বিদেশে/ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়। তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধান কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা একান্ত প্রয়োজন।
ইউনিয়ন ব্যাংকের এমডি মোকাম্মেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা : ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবিএম মোকাম্মেল হক চৌধুরীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। দুদকের উপপরিচালক মো. মাসুদুর রহমান এ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর এ বিষয়ে শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেন।
আবেদনে বলা হয়, মোকাম্মেল তার ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে এসআলম গ্রুপের পরিবারের সদস্যদের অনুকূলে বেআইনিভাবে পাঁচ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তার পদের অপব্যবহার করে ও রাজনৈতিক পরিচয়ের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ও বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তিনি দেশত্যাগ করতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তার বিদেশ গমন রহিত করা আবশ্যক।