Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

৮৪ কূটনৈতিক মিশন

ডলার সংকটের মধ্যেও ভাতা বাড়ানোর উদ্যোগ

মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় বৈদেশিক ও আপ্যায়ন ভাতা ১০% করে বৃদ্ধির সুপারিশ

মিজান চৌধুরী

মিজান চৌধুরী

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ডলার সংকটের মধ্যেও ভাতা বাড়ানোর উদ্যোগ

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

ডলার সংকটের মধ্যেও বিদেশে অবস্থিত দেশের ৮৪টি কূটনৈতিক মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘বৈদেশিক এবং অ্যাপায়ন’ এ দুটি ভাতা বাড়ানো হচ্ছে। সরকারের গঠিত ভাতা বাড়ানো সংক্রান্ত কমিটি সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ হারে বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। তবে সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করে সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ হারে বৈদেশিক এবং আপ্যায়ন ভাতা বাড়ানোর ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ বিভাগ। এটি বাস্তবায়ন হলে বিদ্যমান বরাদ্দের চেয়ে এ দুটি খাতে অতিরিক্ত ১৩ লাখ মার্কিন ডলারের প্রয়োজন হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

এদিকে ভাতা বাড়ানোর পর সেটি পরিশোধ করতে হবে মার্কিন ডলারে। কিন্তু দেশে ডলারের সংকট কাটেনি। ফলে ভাতা বাড়ানোর পর বাজেটে কী ধরনের চাপ আসতে পারে সেটিও পর্যালোচনা করছে অর্থ বিভাগ। যদিও বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির মোকাবিলায় এ উদ্যোগ নিতে হচ্ছে এমনটি জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে বৈদেশিক ও আপ্যায়ন ভাতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত সরকারের গঠিত কমিটির প্রধান অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রহিমা বেগম যুগান্তরকে জানান, বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় দুটি ভাতা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে কমিটি। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে অর্থ বিভাগ। তিনি আরও বলেন, মিশনগুলোর বাড়ি ভাড়াসহ অন্যান্য ভাতা প্রতি তিন বছর অন্তর সমন্বয় করা হলেও ২০১২ সালের পর বৈদেশিক ও আপ্যায়ন ভাতা বাড়ানো হয়নি।

অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, এর আগে ২০১২ সালে মিশনের চাকরিজীবীদের আপ্যায়ন ও বৈদেশিক ভাতা এক লাফে ৪০ শতাংশ বাড়ানো হয়। সেটি ছিল প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। যে কারণে দীর্ঘ ১২ বছরে ধরে এ খাতে ভাতা পুনঃনির্ধারণ করা হয়নি। তবে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ এসব ভাতা পুনঃনির্ধারণ করেছে। সেটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা তাদের মিশনগুলো যে ভাতা দিচ্ছে সে তুলনায় দেশের মিশনগুলোর বিদ্যমান ভাতা অর্ধেকের চেয়েও কম।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানান, বর্তমানে বিশ্বের ৬০টি দেশে ৮৪টি কূটনৈতিক মিশন আছে। নতুন করে আরও নয়টি দেশে মিশন স্থাপনের কাজ চলছে। তবে চালু আছে ৮০টি মিশনের কার্যক্রম। এর মধ্যে ৪৭টি দূতাবাস, ১৪টি হাইকমিশন, ১২টি কনস্যুলেট, তিনটি স্থায়ী মিশন, চারটি উপ-হাইকমিশন এবং চারটি সহকারী হাইকমিশন রয়েছে। নিউজিল্যান্ডের রাজধানী ওয়েলিংটন, আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিন, আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্স, নরওয়ের রাজধানী অসলো ও কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে নতুন করে বাংলাদেশ মিশন স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।

সূত্রমতে, বর্তমান মিশনে কর্মরত চাকরিজীবীরা বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে তলে ধরে তাদের ভাতা পুনঃনির্ধারণ প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগকে একটি আধা-সরকারি পত্র দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়, ২০১২ সালের পর গত ১২ বছরে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের মিশনে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বৈদেশিক ভাতা ও আপ্যায়ন ভাতা পুনঃনির্ধারণ (বৃদ্ধি) করা হয়নি। বর্তমান কূটনীতিকগণ বহির্বিশ্বে প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সেখানে আরও বলা হয় মাথাপিছু জাতীয় আয় গত ১২ বছরে প্রায় দ্বিগুণ হলেও বৈদেশিক ও অ্যাপায়ন ভাতা বৃদ্ধি না পাওয়ায় সার্বিক অগ্রগতির সুফল মিশনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।

অবশ্য বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি হার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত আগস্টের হিসাবে জি-৭ দেশগুলোর গড় মূল্যস্ফীতির হার ২ দশমিক ৪ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ২ দশমিক ৫ শতাংশ, তুর্কিতে ৫২ শতাংশ, স্পেনে ২ দশমিক ৩ শতাংশ, মেক্সিকোতে ৫ শতাংশ বিরাজ করছে। এছাড়া জাপানে ৩ শতাংশ, ইতালিতে ১ দশমিক ১ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ায় ৩ দশমিক ৮ শতাংশ এবং বেলজিয়ামে ২ দশমিক ৯ শতাংশে অবস্থান করছে। বাংলাদেশও মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে নেমে আসছে।

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মিশনগুলোতে কর্মরত চাকরিজীবীদের বিভিন্ন ভাতা পুনঃনির্ধারণ নিয়ে গত জুলাই মাসে একটি বৈঠক হয় অর্থ বিভাগে। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বৈদেশিক ও অ্যাপায়ন ভাতা পুনঃনির্ধারণ প্রসঙ্গে কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ওই কমিটি একাধিক বৈঠক করেছে। তবে ভাড়া বাড়ানোর কৌশল হিসাবে ওই কমিটি জীবনযাত্রার মান, ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতা, ডলারের বিনিময় হার এবং ডলার ফ্লাট রেট এই চার ক্যাটাগরিতে মূল্যায়ন করেছে। কমিটির সুপারিশে বলা হয়, ডলারের ফ্লাট মূল্য ধরে ভাতা ১০ শতাংশ হারে বাড়ানো হলে সবচেয়ে কম ব্যয় হবে এ খাতে। কমিটির সুপারিশে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি, সামষ্টিক অর্থনীতি ও বাস্তবতা বিবেচনায় বিভিন্ন দেশে অবস্থিত মিশনগুলোর মধ্যে মুদ্রা বিনিময় হার বিবেচনা করে বৈদেশিক ও অ্যাপায়ন ভাতা পুনঃনির্ধারণ ঠিক হবে। এতে সরকারের বাজেটে চাপ কম পড়ার পাশাপাশি আর্থিক সংশ্লেষ কম হবে।

সূত্র আরও জানায় ওই কমিটি আরও তিন ধরনের সুপারিশ করেছে। সেখানে দেখা গেছে জীবনযাত্রার ব্যয় ধরে ভাতা নির্ধারণ করা হলে সেক্ষেত্রে এ খাতের বাজেট ২২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে, যা ডলারের মূল্যে ২৯ লাখ মার্কিন ডলার। এছাড়া ক্রয়ক্ষমতার বিবেচনায় ভাতা বাড়ানো হলে সেক্ষেত্রে ১৮ লাখ মার্কিন ডলার বেশি প্রয়োজন হবে। এ খাতে বরাদ্দ বাড়বে ১৪ শতাংশ। আর মুদ্রার বিনিময় হার হিসাবে ভাতা বাড়ানো হলে বাড়তি ব্যয় হবে ১৯ লাখ মার্কিন ডলার, বাজেটে বরাদ্দ বাড়বে ১২ শতাংশ।

তবে ভাতা বাড়ানোর প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বৈদেশিক ভাতা মিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পেলেও আপ্যায়ন ভাতা শুধু কর্মকর্তারা পেয়ে থাকেন। ফলে এ দুই ভাতা বাড়ানোর ফলে বেশি লাভবান হবে মিশনের কর্মকর্তারা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম