Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

যমুনা নদীতে নির্মাণাধীন রেল সেতু

চলছে ‘ফিনিশিং ওয়ার্ক’ লাগছে তুলির আঁচড়

মূল সেতুর কাজ প্রায় শতভাগ শেষ

Icon

আসাদুল ইসলাম বাবুল, ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল)

প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চলছে ‘ফিনিশিং ওয়ার্ক’ লাগছে তুলির আঁচড়

প্রমত্তা যমুনা নদীর ওপর নির্মাণাধীন দেশের দীর্ঘতম রেলওয়ে সেতু (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু) প্রকল্পের কাজ প্রায় ৯৬ শতাংশ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে মূল সেতুর কাজ সম্পন্ন প্রায় শতভাগ। এখন সেখানে চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ, প্রকৌশলীদের ভাষায় যা ‘ফিনিশিং ওয়ার্ক’। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, নভেম্বরে ট্রায়াল ট্রেন এবং ডিসেম্বর থেকে এ সেতু দিয়ে যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল শুরু করা যাবে। রোববার প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

সেতুটি চালু হলে বিরতিহীনভাবে কমপক্ষে ৮৮টি ট্রেন দ্রুতগতিতে নদী পার হতে পারবে। ফলে সেতু পারাপারে ২০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা সময় বাঁচবে এ রুটের ট্রেনগুলোর। সূত্র জানায়, সাধারণ ট্রেন ছাড়াও দ্রুতগতির (হাইস্পিড) ট্রেন চলাচলের উপযুক্ত করে নির্মাণ করা হচ্ছে এ সেতু। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো যাবে। তবে সাধারণত ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো হবে। রোববার সকালে সেতুর পূর্ব এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মূল সেতুর নির্মাণকাজ শেষ, সেতুর একপাশ দিয়ে বসানো হচ্ছে গ্যাসপাইপ লাইন। সেতু পূর্ব স্টেশনে চলছে রং ও ঘষামাজার কাজ। আর সেতু পশ্চিম এলাকায় রেলপথের সংযোগ দেওয়ার কাজে ব্যস্ত দেখা গেছে শ্রমিকদের। সেতু পশ্চিম স্টেশনে চলছে ভবন ও প্ল্যাটফরম নির্মাণ। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, স্টেশন ভবন ও প্ল্যাটফরমের কাজ শেষের পথে। তবে দুই স্টেশনে কম্পিউটারভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় সংকেত ব্যবস্থা (কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলিঙ্ক সিস্টেম-সিবিআইএস) স্থাপনের কাজ পিছিয়ে আছে। ডিসেম্বরে সেতু চালু হলেও এর মধ্যে সিবিআইএস চালু করা সম্ভব হবে না। ফলে কাঙ্ক্ষিত গতিতে ট্রেন চালানো কঠিন হবে। এ ছাড়া এ সেতুর পূর্ণ সুফল পেতে চাইলে জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী ডুয়ালগেজ ডাবললাইন নির্মাণের অপেক্ষায় থাকতে হবে, যে প্রকল্পের কাজ এখনো শুরুই হয়নি।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিডি) আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আমরা মূল সেতুর কাজ প্রায় শতভাগ শেষ করেছি। পূর্ব অংশে রেলপথের সঙ্গে সংযোগ দেওয়া হয়েছে, এখন পশ্চিম অংশে সংযোগের কাজ চলছে। সেতু পূর্ব স্টেশন ও সেখানকার প্ল্যাটফরমের কাজ শেষ। সেতু পশ্চিম স্টেশনের কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রকল্পের প্রায় ৯৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। যেভাবে কাজ এগোচ্ছে, আশা করা যায়, ডিসেম্বরে সেতু দিয়ে ট্রেন চালানো শুরু করা যাবে। 

সিবিআইএস স্থাপনের কাজ কতদূর, নভেম্বরের মধ্যে শেষ করা যাবে কি না-জানতে চাইলে মাসুদুর রহমান বলেন, সম্ভবত শেষ করা যাবে না। এর কিছু পার্টস এখনো শিপমেন্টের পর্যায়ে রয়েছে। তবে তা না হলেও সেতু হয়ে ট্রেন চালানো যাবে। মূল সেতুতে চলাচলে এখনই কোনো সমস্যা নেই। স্টেশনগুলোয় সিবিআইএস না বসা পর্র্যন্ত ননইন্টারলক সিস্টেমে (ধীরগতিতে) ট্রেন চালাতে হবে। আর গ্যাসলাইন স্থাপনের কাজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আশা করি ডিসেম্বরের মধ্যে সেটিও সম্পূর্ণ হবে। 

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নেওয়া প্রকল্পে রেল সেতুর নির্মাণ ব্যয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা ধরা হয়েছিল। পরে এর মেয়াদ ২ বছর বাড়ানো হয়। প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে তা ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকা দাঁড়ায়। এর মধ্যে দেশীয় অর্থায়ন ২৭.৬০ শতাংশ এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ঋণ দিয়েছে ১২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা, যা প্রকল্পের ৭২.৪০ শতাংশ। 

ডুয়েলগেজ ও ডাবল ট্র্যাকসহ প্রায় ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার রেল সেতুর দুই পাশে ০.০৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, ৭ দশমিক ৬৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট এবং লুপ সাইডিংসহ রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। রেলপথের পাশাপাশি গ্যাস সঞ্চালন লাইন বসানো হচ্ছে। ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় কমিয়ে দেওয়া হয় ট্রেনের গতি। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পার হচ্ছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম